‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও স্ত্রী-সন্তানদের জব্দ সম্পদ দেখে যে কারোর চোখ কপালে উঠবে। দুদকের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শতাংশ জমি, বহুতল ভবন, ৬টি ফ্ল্যাট, ১১৬টি ব্যাংক হিসাব এবং ২৩টি বিও হিসাব ক্রোক হয়েছে।
তাদের আরও সম্পদের খোঁজ চলছে।
১৫ লাখ টাকায় কেনা ছাগলের মালিক খুঁজতে গিয়ে সামনে আসে মতিউর রহমান। এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে তার থলের বিড়াল। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদফায় জব্দ করা হয় তার অঢেল সম্পদ।
প্রথম দফায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজার ১৯ শতাংশ জমি, রাজধানীতে বহুতল ভবনসহ ১০ কাঠা জমি ও দুটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে সম্পদের আরও ভয়াবহ তথ্য।
১৪ পাতার সম্পদ তালিকায় দেখা যায়, শুধু নিজের নামেই সম্পদ গড়েননি মতিউর। চতুর এ সরকারি কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং নিজেকে আড়াল করতে অর্জিত সম্পদ দুই স্ত্রী, দুই পরিবারে দুই সন্তান, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ আত্মীয় স্বজনদের নামেও রেখেছেন।
মতিউর ও তার প্রথম স্ত্রীর নামে এসব সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।
দ্বিতীয় দফায় দুদকের আবেদনে মতিউর গংদের দুই হাজার ৩৬৭ শতাংশের বেশি জমি, চারটি ফ্ল্যাট, ১১৬টি ব্যাংক হিসাব এবং ২৩টি বিও হিসাব ক্রোক করা হয়েছে।
তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম পক্ষের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ব্যাংকে রয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১০ কোটি টাকা, আর জমির পরিমাণ ৫৩৮.৭১১২৫ শতাংশ। আর ভাই কাইউম হাওলাদারের নামে রয়েছে ৮৯২ শতাংশ জমি আর ব্যাক হিসাবে ১৪ কোটি টাকা। যেখানে মতিউরের নিজ নামীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ এদের তুলনায় অনেক কম, মাত্র ৫৫ লাখ টাকা।
মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার ও প্রথম পক্ষের ছেলে অর্ণবের নামে থাকা বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।
নথিপত্রে দেখা যায়, সম্মিলিত ১১৬টি ব্যাংক হিসাবে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা জমা রয়েছে। যদিও অভিযোগ আছে ছাগল কাণ্ডের পর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আগ পর্যন্ত বিপূল পরিমাণ নগদ অর্থ উত্তোলন করেছেন মতিউর ও তার স্বজনরা। তবে বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, নামে-বেনামে আরো প্রচুর সম্পদ রয়েছে এদের যা পেতে খোঁজ অব্যাহত রেখেছে দুদক।
মতিউর ১৯৯৩ সালে যোগ দেন কাস্টমস বিভাগে। ২০১৫ তে পদোন্নতি পেয়ে হন কমিশনার। ২০২১ সালে নিয়োগ পান কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে। সবশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ায় তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে অর্থ বিভাগে।