স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠের ‘খাটিয়া’। ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন। এরপর করছেন দর কষাকষি। সবকিছু ঠিকঠাক হলেই ক্রেতা-বিক্রেতার সওদা হচ্ছে। এই চিত্র রাজধানীর কারওয়ান বাজারের। প্রতি বছর ঈদুল আজহা এলেই এসব ‘খাটিয়া’ নিয়ে বাজারের কাঠপট্টিতে বসে মৌসুমি দোকান।
খাটিয়ার যারা বিক্রেতা তারা অধিকাংশ কাঠ ব্যবসায়ী। আর যারা ক্রেতা তারা অধিকাংশই মৌসুমি ও পেশাদার কসাই। তবে এখানকার ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই কোরবানি ঈদের এক থেকে দুইদিন আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় আসেন শুধু বাড়তি আয়ের আশায়।
রোববার (১৬ জুন) সরেজমিনে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গল এসব তথ্য। শুধু তাই নয়, তাদের আয়, ‘খাটিয়া’ তৈরির কাঠের দাম এবং বছরের অন্যান্য সময় কী করেন এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।
ময়মনসিংহের শেরপুর থেকে খাটিয়া বিক্রি করতে এসেছেন আসলাম নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, “তিন বছর ধরে কোরবানি ঈদের আগে এই বাজারে খাটিয়া বিক্রি করতে আসি। এখানে শত শত কাঠের খাটিয়া বিক্রি হয়। এগুলো তেঁতুল কাঠ দিয়ে তৈরি। কয়েকদিনের আয়ের জন্যই আসি।”
আব্দুর রফ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, “অন্য কাঠে কোপ দিলে কেটে যায়। তেঁতুল কাঠের ছাড়া খাটিয়া হয় না। এগুলো দুই-তিন দিনের ব্যবসা। আমি দেশে গাড়ি চালাই। দুই দিনে যা বিক্রি হয় তা নিয়েই বাড়ি ফিরি।”
সোহেল নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “এ বছর ব্যবসাটা কম। আগে যেসব খাটিয়া ৫০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করেছি এবার সেগুলো ২০০-৪০০ টাকা। এবার মানুষের হাতে টাকা কম। তাই ব্যবসা নেই আমাদের। বছরে একবারই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসি।”
এদিকে, সোনারগাঁও থেকে প্রতি বছর ঢাকায় গরু জবাই দিতে আসেন পেশাদার কসাই খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, “কোরবানির দিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। এটা বাড়তি আয়। বছরের অন্যান্য সময় মাংসের ব্যবসা করি।”
খোরশেদের দলে রয়েছেন স্বপন নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, “বছরে তো একবারই আসি। অন্যান্য সময় গাড়ি চালাই। একেকটা গরুর জন্য প্রায় ৬ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেই। এতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আমরা পাঁচজন আসছি দল বেঁধে। আয়ের চেয়ে আনন্দটাই বেশি।”
ফরিদপুর থেকে আসা দেলোয়ার মোল্লা বলেন, “আমরা তো কোরবানি দিতে পারি না। তাই কোরবানির গরু জবাই দিতে আসি। গরুর দাম যা হবে তা থেকে ১০ শতাংশ আমরা জবাই করার খরচ ধরি। গরুর দাম ১ লাখ হলে ১০ হাজার টাকা নিই। কেউ কম বললে আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেই। আমাদের কাজ ঈদের পর দিন পর্যন্ত হয়। ঈদের দিন ৪ থেকে ৫টা পর্যন্ত গরু কাটতে পারি। আমাদের দুইদিনের ব্যবসা।”