বৈশাখের গরমে চারদিকে হাঁসফাঁস অবস্থা। ঢাকাতেই তাপমাত্রা ৪০ ছুঁই ছুঁই। আর চুয়াডাঙ্গায় উঠেছে ৪২ ডিগ্রির ওপরে। এই গরমে দেশের রেললাইনগুলোতে তাপমাত্রা গিয়ে ঠেকছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি। এতে লাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষ গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে স্থান ও রেললাইনের বয়স বিবেচনায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটাকে রেলের ভাষায়, স্ট্যান্ডিং অর্ডার বা স্থায়ী আদেশ বলা হয়। কারণ, প্রতিবছরই গরমের সময় এই ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকে রেল কর্তৃপক্ষ। মূলত বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গতি কমানো হয়। কারণ, এই সময়টাতেই রেললাইন বেশি গরম হয়।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, পৃথিবীর উপরিভাগে যত তাপমাত্রা থাকে, রেললাইনে তার চেয়ে ১০ বা ১২ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা তৈরি হয়। রেলের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাছে রেললাইনের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রয়েছে। তারা মেপে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেলেই গতি কমানোর নির্দেশনা আসে। এই তাপমাত্রায় নতুন লাইন বেঁকে যেতে পারে। লোহার পাত জোড়া দিয়ে দিয়ে সমান্তরাল রেললাইন বসানো হয়। জোড়াগুলোর জায়গাতে সামান্য ফাঁকা রাখা হয়। যাতে তাপে লোহার সম্প্রসারণ হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু অত্যধিক তাপে সম্প্রসারণ বেশি হয়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা বেশি হলে রেলের পাত বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের নজির অনেক জায়গায় রয়েছে। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেললাইন বেঁকে গেছে। এ ছাড়া গত বছর ব্রিটেনে গরমের কারণে রেল চলাচল বিঘ্নিত হয়েছিল।
তাপমাত্রা যদি ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে রেললাইনের ওপরে সূর্যের তাপ ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রেললাইনকে সাদা রং করে দেওয়া হচ্ছে, যাতে সেটি কম তাপ শোষণ করে। যুক্তরাজ্য, ইতালিসহ অনেক দেশে এটা করা হচ্ছে। রেললাইনে সাদা রং করা হলে সেটির তাপমাত্রা ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে।
গরম ছাড়াও রেলের পাত এভাবে বেঁকে যাওয়ার ঘটনার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এটা যদি খুব পুরাতন রেললাইন হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো সেটার টেম্পার চলে গিয়ে থাকতে পারে। যখন এই রেললাইন বসানো হয়েছে, সেই সময়ের তাপমাত্রার তুলনায় এখনকার তাপমাত্রার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
দুর্ঘটনা এড়াতে প্রচণ্ড গরম বা তাপদাহ চলার সময় দেশের অন্য সব রেললাইন পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।