• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যেভাবে ‘জল্লাদ’ হলেন শাহজাহান


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৪, ০৫:৩৭ পিএম
যেভাবে ‘জল্লাদ’ হলেন শাহজাহান
শাহজাহান ভূঁইয়া। ছবি : সংগৃহীত

শাহজাহান ভূঁইয়া, যিনি ‘জল্লাদ’ শাহজাহান নামেই পরিচিত। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে তার জন্ম। শাহজাহানের বাবার নাম মৃত হাছেন আলী, মায়ের নাম মেহের। বাবা-মা ছাড়াও তার তিন বোন ছিল। তাদের মধ্যে বর্তমানে ফিরোজা বেগম নামের এক বোন বেঁচে আছেন।

ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন শাহজাহান। এরপর অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর সব অপরাধ করেন। ওইসময় অপরাধের পাশাপাশি চারদিকে তার নামডাক ছড়িয়ে পরে। ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, নেওয়া হয় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে। এরপর দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ।

টিকটক করছেন শাহজাহান ভূঁইয়া। ছবি : সংগৃহীত

কারাগারে থাকাকালীন সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘জল্লাদ’ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন শাহজাহান। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে ‘জল্লাদ জীবন’ শুরু করেন তিনি। এক সময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আনা হয় শাহজাহানকে। সেখানে তাকে প্রধান জল্লাদের আসন দেওয়া হয়।

কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় শাহজাহান ভূঁইয়া। ছবি : সংগৃহীত

কারাগারের নথি অনুযায়ী, প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পাওয়ার পর ‘জল্লাদ’ শাহজাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক (বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ), চার যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী), কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির ও ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন।

বইমেলায় শাহজাহান ভূঁইয়া। ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান। শাহজাহানের ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু কারাগারে জল্লাদের কাজ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত (সাজা মওকুফ) পান। ওই দুই মামলায় তার পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। মুক্তির সময় কারা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করে দেয়।

বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়লেন শাহজাহান ছিলেন অবিবাহিত। তবে, কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। সে সংসার টেকেনি। এ নিয়ে আইনি জটিলতায়ও পড়েন। এর কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে টিকটকসহ কিছু ভিডিওতে অভিনয় করতে দেখা যায়।

স্ত্রীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান ভূঁইয়া। ছবি : সংগৃহীত

সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর একটি হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সেই আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান।

মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন শাহজাহানের বোন ফিরোজা বেগম।

ফিরোজা বেগম বলেন, “ভাই বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে থাকতেন। রোববার (২৩ জুন) রাতে তার বুকে ব্যথা শুরু হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।”

ডিএমপির তেজগাঁও জোনের শের-এ-বাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর আজম বলেন, “সাভারের হেমায়েতপুরের জাদুরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহজাহান। রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বুকে ব্যথা শুরু হলে তাকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।”

Link copied!