চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে তুচ্ছ এক ঘটনায় বিরোধে জড়িয়ে পড়েন ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সেই ঝগড়ার সূত্র ধরেই করা হয় হত্যার পরিকল্পনা। আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
যেভাবে ঝগড়ার শুরু
১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে গিয়েছিলেন মির্জা মাহাফুজ। তখন ক্লাবে আসেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আজিজ, মাহাফুজের স্ত্রীকে গান গাইতে বলেছিলেন। তবে সেখানে উপস্থিত সোহেল চৌধুরী ও তার কয়েক বন্ধু গান থামাতে বলেছিলেন।
সোহেল চৌধুরী আর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়ার শুরুটা এমনই ছিল। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে মির্জা মাহাফুজ আদালত ও পুলিশের কাছে সেদিনের ঘটনা জবানবন্দিতে তুলে ধরেছিলেন।
১৬১ ধারার জবানবন্দিতে মির্জা মাহাফুজ পুলিশকে বলেছিলেন, ঘটনার সময় উত্তেজিত হয়ে সোহেল চৌধুরী ও তার লোকজন একপর্যায়ে মাহাফুজের টেবিলের সামনে আসেন। তখন আজিজের পাশে বসা এক নারীকে উঠে আসতে বলেন। কিন্তু ওই নারী উঠতে না চাইলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সোহেল চৌধুরী।
হত্যার হুমকি
ঝগড়ার সেই সময়ে সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন তার আরেক বন্ধু গোলাম মোহাম্মদ। তিনিও ছিলেন মামলার সাক্ষী। সে সময়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বিচারককে গোলাম মোহাম্মদ বলেছিলেন, তার সামনেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝগড়া হয়। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের (মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত) সঙ্গে সোহেলের দুই থেকে তিনবার ঝগড়া হয়। পরে তা মিটেও যায়।
সোহেল চৌধুরীর বন্ধু গোলাম মোহাম্মদ আর বলেছিলেন, সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতলেরও (মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত) কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়েছিল। আর সেই আশীষই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বের করে দিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে সোহেল যেন ক্লাবে না আসে সেজন্যও হুমকি দিয়েছিলেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলামের লোকজন টেলিফোনে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন সোহেল চৌধুরীকে। তারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, সোহেলের মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছে। সন্তান হত্যার বিষয় নিয়ে আদালতকে এ কথা বলেছিলেন সোহেল চৌধুরীর মা নূরজাহান বেগম।
যেভাবে হত্যাকাণ্ড
সোহেল চৌধুরীর বাসা ছিল বনানীর সেই ট্রাম্প ক্লাবের উল্টোদিকে। হত্যাকাণ্ডের আগে রাত দুইটার দিকে বাসায় ফিরেছিলেন সোহেল। পরে আবারও ক্লাবে যান। তখন সন্ত্রাসীরা তাকে দুটি গুলি করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
মামলার অভিযোগপত্রে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, সেই রাতে সোহেল চৌধুরী ক্লাবে ঢুকতে চেয়েছিলেন। তবে তাকে ক্লাবে ঢুকতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাত তিনটার দিকে আবারও ক্লাবের সামনে আসেন। তখন পেশাদার খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আবুল কালাম নামে মামলার এক সাক্ষী জবানবন্দিতে বলেন, সেই রাতে সোহেল চৌধুরীসহ সাত থেকে আটজন ক্লাবের সামনে গেলে হঠাৎ গুলিবর্ষণ করা হয়। সোহেলের পেটে গুলি লাগলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পরে মারা যান। সন্ত্রাসীদের গুলিতে আরও বিদ্ধ হয়েছিলেন নীরব ও দাইয়ান।
গুলি করার পর ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক গাড়িতে করে পালিয়ে গিয়েছিলেন। মামলায় উঠে আসে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর আগের ঝগড়ার জের ধরেই সোহেল চৌধুরীকে ঠান্ডা মাথায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।