হঠাৎ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। গত কয়েক দিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর, নবোদয় হাউজিং, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান এলাকায় কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বাড্ডা, রামপুরা ও ভাটারা এলাকায়ও চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ নানাভাবে নির্যাতন চালায় পুলিশ। এরপর ছাত্র-জনতার রোষের মুখে পড়ে দেশ ত্যাগ করেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিক্ষিপ্ত জনতা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালাতে শুরু করেন। আগুন দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি থানায়। এতে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কর্মবিরতি দিয়ে পুলিশ লাইন্সে চলে যান। যার কারণে পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে নগরী।
এদিকে পুলিশ না থাকায় নগরীতে তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি অসাধু চক্র। তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে লুটপাট চালাতে শুরু করে। এছাড়া রাস্তা-ঘাটেও ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার একটি বাড়ির মালিক। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয়রা ১১ জনকে আটক করে তাদের হাতে তুলে দেন।
স্থানীয়রা জানান, তারা দেখেন দেশীয় অস্ত্র হাতে তরুণ কিশোরদের ছোট ছোট দল রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে। তারা বিভিন্ন বাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলতে বলছিল। এসময় এলাকার মসজিদগুলো থেকে ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে মাইকিং শুরু হয়।
চানমিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বলেন, “রাত ৩টার দিকে মসজিদ থেকে ডাকাত পড়েছে, ডাকাত পড়েছে বলে মাইকিং শুরু হয়। ভবনের লোকজন ব্যাপক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই লাঠিসোঁটা হাতে নিচ তলার গ্যারেজে এসে দাঁড়ান। এক পর্যায়ে এলাকার তরুণ যুবকেরা রাস্তায় নেমে আসেন।”
নবোদয় হাউজিংয়ের ওই বাড়ির মালিক বলেন, “শেষ রাতের দিকে কয়েকজন যুবক ‘কাকা কাকা’ ডাকতে ডাকতে বাড়ির মেইন গেইট ধাক্কাতে থাকে। দরজা খুলে বের হলে ওরা বলে, ‘কাকা ভয় পাবেন না, একটু কথা আছে, বের হয়ে আসেন।’ আমি দরজা খুলতেই বিশাল এক রামদা গলায় ধরে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। কিছু মারধরও করে। এক পর্যায়ে ঘরে থাকা সৌদি রিয়ালসহ প্রায় দুই লাখ টাকা নিয়ে তারা চলে যায়।”
এদিকে ডাকাতির আতঙ্কের মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পাহারা বসিয়েছেন আল্লাহ করীম জামে মসজিদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
কাজী শিপন আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সোমবার রাত থেকে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট ভেঙে একের পর এক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পুলিশ না থাকার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। তাই আমাদের মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছি।” জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় দায়িত্বে ফেরার অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে পুলিশ না থাকায় সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন থানাও পাহারা দিচ্ছিলেন তারা। পরে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দেশের সব পুলিশ স্টেশনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং রাজধানী ঢাকার ট্রাফিকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আনসার ব্যাটালিয়নকে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীটিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ সদস্যদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ব-স্ব ইউনিটে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম। বুধবার (৭ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ সদস দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।