সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে এমন আচরণ দেশ ও দেশের জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি অভিযোগ করেন, ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অশোভন আচরণ শেখ হাসিনার তৈরি করা দুঃশাসনেরই অভিব্যক্তি। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের রাজনীতি জটিল করতে বাইরে থেকে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আওয়ামী লুটপাটের সুবিধাভোগীরা বিদেশে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছেন।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন সূত্রে জানা যায়, জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দেশে ফিরছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। দূতাবাসের প্রটোকলে তিনি গাড়ি করে জেনেভা বিমানবন্দরে পৌঁছান।
এ সময় দূতাবাসের প্রটোকল আইন উপদেষ্টার সঙ্গে ছিল। গাড়ি বিমানবন্দরে নামার পর একদল লোক এসে আইন উপদেষ্টাকে ঘিরে ধরেন। উপদেষ্টা জেনেভা বিমানবন্দরে প্রবেশের আগ পর্যন্ত হেনস্থাকারীরা তাকে বিরক্ত করেন।
সুইজারল্যান্ডের বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, জেনেভা বিমানবন্দরে আইন উপদেষ্টাকে হেনস্থাকারীরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। সেখানে সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় হেনস্থাকারীদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “গতকাল জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কতিপয় আওয়ামী দুষ্কৃতকারী উদ্ধত আচরণ করে। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে এহেন শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বরং দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত।”
ফ্যাসিবাদের হিংস্র রূপের প্রকাশ এখনও দেশে-বিদেশে অনেক স্থানে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রবাসে আওয়ামী নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অবয়ব ধারণ করে সুযোগ পেলেই গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আবারও প্রমাণিত হলো এরা বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, বিভাজন, সংকীর্ণতা, অনৈক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির হরিলুট এবং বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারসহ অসৎ অনাচারের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার হত্যা ও গুমের রাজনীতির বিশ্বাস থেকে সরে আসেনি। এরা গণতন্ত্রস্বীকৃত মানবাধিকার, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়।”
গণতন্ত্রের সঙ্গে শত্রুতা আওয়ামী লীগের চিরদিনের বৈশিষ্ট্য মন্তব্য করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “রক্তাক্ত পন্থায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরাজিত করতে না পেরে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় শেখ হাসিনার ক্রোধ যেমন থামছে না, তেমন দেশে-বিদেশে তার সমর্থকরাও প্রচণ্ড হাতাশা নিয়ে সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রকামী মানুষদের হত্যা করছে বা শারীরিকভাবে আঘাতসহ নানাভাবে হয়রানির কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অশোভন আচরণ শেখ হাসিনার তৈরি করা সেই দুঃশাসনেরই অভিব্যক্তি।”
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, “পতিত শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতি জটিল করে তুলতে বাইরে থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লুটপাটের সুবিধাভোগীরা বিদেশে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। গণতন্ত্রের সপক্ষের ব্যক্তিবর্গকে হেনস্থা করাসহ বাংলাদেশের ভেতরেও অন্তর্ঘাত সৃষ্টির গভীর চক্রান্তজাল বুনে যাচ্ছে। লুটপাটের স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য উদ্গ্রীব ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশে-বিদেশে নানা এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। আওয়ামী লীগ বরাবরই ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ রাজনৈতিক দল। ক্ষমতা হারানোর মনোবেদনায় এরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেছে নেয়।”
আইন উপদেষ্টার ওপর ফ্যাসিস্ট দোসরদের অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি দাবি জানান, ‘আত্মপ্রত্যয়হীন, যুক্তিবিমুখ, মানবতাবিরোধী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসরদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে গণতন্ত্রকামী প্রবাসী বাংলাদেশিরা ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন ও বিচার বিভাগকে অবহিত করতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী দৈত্যকে জনগণই বোতলবন্দি করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এসব আওয়ামী কুচক্রীকে বিচারের আওতার মধ্যে আনতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’