‘গৃহকর্মী শিশুটিকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করা হয়েছে। গৃহকর্ত্রীর বাচ্চার খাবার খাওয়ায় নির্যাতন করা হতো। গৃহকর্ত্রীর বাচ্চার সঙ্গে খেলাধুলা করতো হেনা। ওই সময় কোনো কারণে তার বাচ্চার সঙ্গে হেনার মারামারি হলেও নির্যাতন করা হতো। আর নির্যাতনের মাত্রা এমন ছিল যে, বিছানায় মলত্যাগ করে ফেলতো গৃহকর্মী শিশুটি।’
রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে গৃহকর্মী হেনাকে (১০) এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন করে গৃহকর্ত্রী সাথী পারভীন ডলি হত্যা করেছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শিশু গৃহকর্মী হেনা মাঝে মাঝে গৃহকর্ত্রী সাথী পারভীন ডলির বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলতো। এজন্য হেনাকে নির্যাতন করে হত্যা করেন সাথী পারভীন ডলি। তাকে হত্যার পর নিজের মোবাইল রেখে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করেন তিনি। এরপর চলে যান যশোরে।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ হোসেন এ তথ্য জানান।
কলাবাগান থানার পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৫ আগস্ট সকালেও হেনাকে নির্যাতন করা হয়। শিশুটি মারা যাওয়ার পর পালিয়ে যান গৃহকর্ত্রী সাথী।
ওইদিন রাতে ফোনে গৃহকর্মী হেনার মৃত্যুর প্রাথমিক তথ্য পান তারা। এরপর রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান থানাধীন সেন্ট্রাল রোডের ৭৭ নম্বর ভবনে গিয়ে বেশ কটি বাসায় খোঁজও নেয় পুলিশ। ওই ভবনটিতে ৪৪টি ফ্ল্যাট। মধ্যরাতে সব ফ্ল্যাটে খোঁজ নেওয়া বেগতিক বুঝে ফিরে আসে পুলিশ। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির মালিক সোসাইটির লোকজন নিয়ে ভবনটির দ্বিতীয় তলা ই-১ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় গৃহকর্মী হেনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, হেনা ময়মনসিংহ মুক্তগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ি গ্রামের মৃত হক মিয়া ও মৃত হাসিনা বেগমের মেয়ে। তিন বছর আগে গৃহকর্ত্রী সাথী আক্তার পারভীন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় একটি ট্রেনিংয়ে যান। সেখানে হেনাকে দেখেন। তখন তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন গৃহকর্ত্রী সাথী আক্তার ডলি। সেসময় হেনার স্বজনদের গৃহকর্ত্রী সাথী বলেছিলেন- হেনাকে তার নিজের সন্তানের মতো করে রাখবেন।
এরপর মাস শেষে ২ হাজার টাকা করে হেনার ফুফুর কাছে পাঠাবেন। ৪ মাস দুই হাজার করে টাকা পাঠায় গৃহকত্রী ডলি। এরপর আর কোনো টাকা পাঠাননি। হেনার জন্য টাকা আলাদাভাবে জমিয়ে রাখছেন বলে তখন স্বজনদের জানানো হয়।
গত ২৬ আগস্ট দুপুরে কলাবাগানের ভূতের গলির একটি বাসা থেকে শিশু গৃহকর্মী হেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশের সুরতহাল দেখে ধারণা করা হয়- তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। এতে সাথী আক্তার পারভীন ডলিকে আসামি করা হয়েছে।