সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতে কূটনৈতিক চিঠি (নোট ভার্বাল) পাঠিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ভারত। এদিকে বাংলাদেশও দিল্লির উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের উত্তরের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের আনন্দবাজার। প্রতিবেদনে বলা হয়, দিল্লি ইতিমধ্যে ঢাকার কূটনৈতিক চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে। তবে এ নিয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য এখনই করতে চাইছে না দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পাঠানো কূটনৈতিক বার্তার ‘আইনি বৈধতা’ কতটা, খতিয়ে দেখবে নয়াদিল্লি। কোনো অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনো রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে, তার সমস্ত আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলেই বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক চিঠির উত্তর অবশ্যই দেওয়া হবে ‘যথাসময়ে’। কিন্তু তার জন্য কোনো তাড়াহুড়ো করা হবে না। সূত্রের খবর, সব দিক খতিয়ে দেখে জবাব দিতে কয়েক মাস লাগতে পারে।
এদিকে দিল্লিতে কূটনৈতিক চিঠি পাঠানোর পর এই মুহূর্তে কিছুটা ‘ধীরে চলো’ নীতিতেই এগোতে চাইছে বাংলাদেশ। ভারতের থেকে কোনো উত্তর পাওয়ার পরই হাসিনার প্রত্যর্পণের প্রসঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে দিল্লির উত্তর পাওয়ার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে। একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও কোনো জবাব না পেলে, ফের একবার চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মুখপাত্র।
জুলাই-অগাস্ট মাস ধরে চলা বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের গত ৫ আগস্ট জেরে পতন হয় আওয়ামী লীগের সরকারের। সেই দিনই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ছাড়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৩৩টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১৯৮টি ক্ষেত্রে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসিনাসহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
অক্টোবরের শেষের দিকে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ফিনান্সিয়াল টাইম্স’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, এখনই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর কোনো ভাবনা নেই তাদের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব।”