নরসিংদীর পোশাককর্মী রুবিনা খাতুন নিজের হাতে মেহেদি দিয়ে যে প্রেমিকের নাম লিখেছিলেন। সেই প্রেমিকই বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে রুবিনার হাতের ওপর মেহেদি দিয়ে লেখা সেই নামের ওপর আরও এক টিউব মেহেদি দিয়ে লাশ নদীতে ফেলে দেন ঘাতক প্রেমিক এনামুল সানা।
তদন্তে নেমে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে আশুলিয়া থেকে এনামুল সানা এবং তার সহযোগী সোহাগ রানাকে গ্রেপ্তারের পর এ হত্যা রহস্য উদঘাটন করে র্যাব।
এর আগে, শনিবার ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার বংশাই নদী থেকে রুবিনার লাশ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
এনামুলও এক সময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এখন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। তার বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়, কাজের সূত্রে থাকেন আশুলিয়ায়। তিনি বিবাহিত। তার সন্তানও আছে। মারামারি, শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা থাকার তথ্য পেয়েছে র্যাব।
এনামুলের দুঃসম্পর্কের আত্মীয় সোহাগ বাসের হেলপার। এর আগে তিনি মাদক মামলায় এক মাস জেলও খেটেছেন।
২৪ বছর বয়সী রুবিনা খাতুন নরসিংদীর পলাশ এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল ওয়ারেছ।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, “গত ৯ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় বংশাই নদীতে এক নারীর মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ পুলিশ ও র্যাবকে জানায়। পরে র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করে।”
লাশ উদ্ধারের পরদিন গত ১০ ডিসেম্বর রুবিনার ভাই আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জেনেছে, মাস ছয়েক আগে এনামুলের সঙ্গে রুবিনার সোশাল মিডিয়ায় পরিচয় হয়। এরপর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল প্রায়ই রুবিনাকে বেশি বেতনে চাকরির আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন।
গত ৩ ডিসেম্বর এনামুলের স্ত্রী-সন্তান পাইকগাছায় চলে গেলে সে রুবিনাকে আশুলিয়ায় তার বাসায় নিয়ে আসে। ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রুবিনা ওই বাসায় ছিল। সে সময় রুবিনা বারবার এনামুলকে বিয়ের কথা বললে সে রাজি হয়নি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদও হয়।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল বলেছেন, ৮ ডিসেম্বর রুবিনা ফের বিয়ের কথা তুললে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন।
র্যাব-৪ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুর রহমান জানান, রুবিনার হাতে মেহেদি দিয়ে এনামুলের নাম লেখা ছিল।
মোহাম্মদ আব্দুর রহমান আরও জানান, ভালোবেসে প্রিয় মানুষের নামটি লিখেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে এনামুল রুবিনার হাতে লেখা নিজের নামের ওপর এক টিউব ইনস্ট্যান্ট মেহেদি মাখিয়ে পুরো জায়গাটা কালো করে ফেলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, “রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল পরিস্থিতি সামাল দিতে সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানিয়ে তাকে বাসায় ডেকে আনে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী দুজনে মিলে রাত ৩টার দিকে রুবিনার মৃতদেহ চাদরে পেঁচিয়ে এনামুলের মোটরসাইকেলে করে ৫ কিলোমিটার দূরে বংশাই নদীর ওপর রাঙামাটি ব্রিজে নিয়ে যান। পরে ব্রিজ থেকে রুবিনার লাশ নদীতে ফেলে দেন তারা।”
রুবিনার ভাইয়ের করা মামলার তদন্তে নেমেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কমান্ডার মঈন।