পাচার করা অর্থ দেশে আনতে এবং পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগ করছে সরকার। এই বিষয়ে গঠিত সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্সের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, একইসঙ্গে বিদেশে দূতাবাসগুলো অর্থ পাচারকারীদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করবে। গঠিত টাস্ক ফোর্স এই বিষয়ে কাজ করছে এবং পরবর্তী বৈঠকে আরো কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৭ শতাংশ ট্যাক্স প্রদান সাপেক্ষে বিদেশে থাকা অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছে। তবে এই বছরের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক এই সুযোগ নেননি।
এখন সরকার পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগের কথা ভাবছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এর আগে, ২০০৯ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সরকার ‘অক্টোখান’ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছিল।
সে সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্থাটিকে উদ্ধারকৃত অর্থের ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে দেয়। পরবর্তীকালে,দুইবার চুক্তি নবায়ন করা হয়েছিল। তবে ২০১৫ সালের পর আর চুক্তি নবায়ন হয়নি।
এনবিআর কর্মকর্তা আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি), এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স সক্রিয়ভাবে বিদেশি সংস্থা নিয়োগ সংক্রান্ত আইনি দিক নিয়ে কাজ করছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ২৯ নভেম্বর টাস্কফোর্সের সপ্তম বৈঠকে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর, সিআইআইডি, সিআইসি, সিআইডি, দুদক ও বিএসইসির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিভিন্ন দেশ পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য এই ধরনের বেসরকারি আইনি সংস্থা নিয়োগ করেছে এবং উদ্ধারকৃত অর্থের একটি অংশ তাদের প্রদান করেছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর একজন প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, বাংলাদেশ এর আগে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলভাবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনেছে।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা তৈরির তাৎপর্যের ওপর জোর দেন। তিনি পরামর্শ দেন যে, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলি এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে পরবর্তীতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে পারে।
বৈঠকে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ যারা দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন তাদের আয়ের উৎস, পেশা এবং ঠিকানা সম্পর্কে তথ্য পেতে দূতাবাসগুলো
নোট ভারবেল জারি করেছে।
একই সঙ্গে, পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ পাঠানো হবে। বৈঠকে আরো বলা হয়, গোপন উপায় বা গোয়েন্দা চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তালিকাটি সংকলন করা যেতে পারে।
বিআইএফইউ-এর প্রতিবেদন উল্লেখ করে বৈঠকে আরও জানানো হয় যে, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড এবং হংকং, চীন সহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি স্থাপন করা দরকার। দুদক অর্থ পাচার তদন্তের জন্য বিভিন্ন দেশকে অনুরোধ করেছে। তারমধ্যে মাত্র দুটি অনুরোধে সাড়া দেওয়া হয়েছে।