স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু হয়েছে। সোমবার (১৬ নভেম্বর) নতুন এই পরিবহনসেবায় পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে জাহাজে করে সরাসরি কনটেইনারে পণ্য আনা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এই সেবা চালুর আগে পাকিস্তানের কনটেইনার পণ্য তৃতীয় দেশ হয়ে চট্টগ্রামে আনা হতো।
প্রথমবার এই সেবায় ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজে করে পাকিস্তান থেকে কনটেইনারে কী পণ্য আনা হয়েছে, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জানিয়েছে, ওই জাহাজে করে পাকিস্তান থেকে বৈধ পণ্য আমদানি হয়েছে। এর আগে পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হতো, ওই সব পণ্যই আমদানি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং জাহাজে করে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়েছে, সেগুলোর বিপরীতে আমরা ৫৭টি বিল অব লেডিং (বিএল) পেয়েছি। এর মধ্যে অধিকাংশ পণ্যই এসেছে পাকিস্তান থেকে। বাকি পণ্য আমদানি করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।’
পাকিস্তান থেকে কী কী পণ্য আনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই শিল্পের কাঁচামাল। এর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ, চুনাপাথর, ডলোমাইট ও ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট।”
এ ছাড়া এই জাহাজে করে পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ, আলু আমদানি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজটিতে করে ৩৭০ টিইইউস কনটেইনার আমদানি হয়। গত মঙ্গলবার ফিরে যাওয়ার সময় জাহাজটি ২৮৮ টিইইউস খালি কনটেইনার এবং পণ্যভর্তি একটি কনটেইনার নিয়ে যায়। রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারটি এবং খালি কনটেইনারগুলো মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ে অবতরণের কথা রয়েছে।
৩৭০টি কনটেইনারের মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৭৩ একক কনটেইনার।
কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে জাহাজটিতে করে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। ৩৭০টি কনটেইনারের মধ্যে ১১৫ কনটেইনারে করে সোডা অ্যাশ আনা হয়। ৪৬টি কন্টেইনারে আনা হয়েছে খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ৩৫টি কনটেইনারে চুনাপাথর, ২৮টি কন্টেইনারে আনা হয়েছে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রঙ। ১০টি কন্টেইনারে আনা হয়েছে ভাঙা কাচ, ছয়টি কন্টেইনারে করে আনা হয় ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট এবং একটি কন্টেইনারে আনা হয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ।
শিল্পের কাঁচামালের বাইরে ওই জাহাজে পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ ও আলু নিয়ে আসা হয়। ৪২টি কন্টেইনারে করে ৬১১ টন আমদানি করা হয় পেঁয়াজ এবং ১৪টি কন্টেইনারে করে ২০৩ টন আলু আমদানি করা হয়।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিস্তারিত তথ্য এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই। বিল অব লেডিং দেখে আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পারব। তবে প্রাথমিকভাবে জেনেছি, এক্স সিরামিকস, প্যাসিফিক জিনস, আকিজ গ্লাস কারখানাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পণ্যগুলো আমদানি করেছে।’
বাকি ৭৩ কনটেইনার পণ্য আমদানি করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ওই দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে, খেজুর, মার্বেল ব্লক, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, কপার ওয়্যার, রেজিন।
দেশে আগেও পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি হতো। তখন পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথমে জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো। পরে ওই সব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে করে চট্টগ্রামে আনা হতো আমদানি পণ্য। সরাসরি সেবা চালুর পর এখন করাচি থেকে জাহাজে বোঝাই করার পর আমদানি পণ্য সরাসরি চলে আসবে চট্টগ্রাম বন্দরে। দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ নতুন এই সেবা চালু করেছে।