প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বাংলাদেশের মেয়েরা আর পিছিয়ে নেই। খেলাধুলা থেকে রাজনীতি, সব ক্ষেত্রে নারীরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। সাংবাদিকতা থেকে শিল্পকলা, সব জায়গায় নারীরা সফল। এখন ইসলাম ধর্মের কথা বলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না।”
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া পদক ২০২৩ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বেগম রোকেয়ার সময় মুসলমান মেয়েরা ঘরে অবরুদ্ধ থাকত। লেখাপড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে তার স্বামী সব সময় তাকে সহযোগিতা করেছেন, তার ভাই তাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় উর্দু, বাংলা, আরবি, ইংরেজি শিক্ষা যেগুলো গ্রহণ করেছেন, সেগুলো তার স্বামীর কাছ থেকে শিখেছেন। স্বামীর কাছে আক্ষরিক জ্ঞান এবং বই পড়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার ভাইয়ের কাছ থেকেও একটি অনুপ্রেরণা পান। তার স্বামীর নামে একটি স্কুল তৈরি করেন। স্কুল তৈরির পরও তাকে অনেক বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়। কারণ, স্বামীর নামে যে স্কুল করেছিলেন, সেখানে ছাত্রী পড়ানো যেত না। তিনি নিজের বাড়ির বাইরে গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন। এটা করতে গিয়ে অনেক পরিবারের বাধা এবং অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। তিনি দমে যাননি কখনো। তার সাহসী ভূমিকা সব সময় আমরা স্মরণ করি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি চাই নারী স্বাবলম্বী হোক। নারীরা স্বাবলম্বী হলে পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। সব জায়গায় তার কথার মূল্যায়ন হয়। আমরা বলতে পারি, এরই মধ্যে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ করতে পেরেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা আফসোস রয়ে গেছে আমার, খুব ইচ্ছা ছিল একজন নারীকে আমি প্রধান বিচারপতি করে যাব। কিন্তু আমাদের সমাজে এত বেশি কনজারভেটিভ, এগুলো ভাঙতে সময় লাগে। সে জন্য করতে পারেনি। এ আফসোসটা থেকে গেল।”
শেখ হাসিনা বলেন, “জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এটাই ছিল পাকিস্তানের আইন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সমস্ত আইন পরিবর্তন করেন। এই আইন পরিবর্তনের পর থেকে আমাদের দেশের মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দিতে পারছে।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সরকারে এসে দেখি আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো নারী জজ নেই। তখন আমি উদ্যোগ নিলাম, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বলেছি, উচ্চ আদালতে কোনো জজ নিয়োগ দেওয়া হলে তাতে যদি কোনো নারী জজের নাম না থাকে, আমি কখনো ওই ফাইল সই করব না, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব না। সেই থেকে যাত্রা শুরু।”
নিজের মায়ের স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বাবার বেশির ভাগ সময় জেলে ছিলেন। সংসার চালানো, দল সুসংগঠিত করাসহ সব কাজই আমার মা করেছেন।”
তিনি বলেন, “ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল। বিজয় অর্জন করেছিল।”
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।