গোপালগঞ্জের মিঞা মো. নুজহাতুল হাচান। কাজ করতেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে, সম্পাদনা করেন ক্যাম্পাসভিত্তিক ওয়েবসাইট। তিনি পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলামের স্ত্রী, অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানার চাচাতো ভাই। তবে মনিরুলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারে তার ওপর ক্ষিপ্ত হন ফারজানা। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে সায়েলার চাচাতো ভাইকে তুলে নিয়ে পাঁচ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করানো হয় গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের দিয়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডে দুটি মামলাও করা হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা বলছেন, নির্যাতন নয়, প্রতারণার কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি।
নুজহাতুল জানান, ওই সংবাদের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তার অভিযোগ, ২০২১ সালের ৩১ মে তাকে তুলে নিয়ে পাঁচ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করে ডিবি। সে দৃশ্য ভিডিও কলে দেখানো হয় ফারজনাকে। পরে মুচলেকায় মুক্তি দিলেও দুই মামলায় জেল খাটতে হয় বছরখানেক।
ভুক্তভোগী মিঞা মো. নুজহাতুল হাচান বলেন, তখন আসলে বিভিন্ন জায়গায় গেছি কিন্তু কেউ সাহায্য করতে চায় নাই। ডিবিতে মনিরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা একটি পারিবারিক টর্চার সেল বানিয়ে ফেলেছিল।
এই ঘটনায় মনিরুল ও ফারজানাকে অভিযুক্ত করছেন নুজহাতুল। বলছেন, এর পেছনে ছিলেন মনিরুলের ভায়রা তখনকার ডিবি উত্তরা জোনের ডিসি কাজী সফিকুল আলম, এসি সাহিদুল ও নাম জানা এক এডিসি। বন্ধ করে দেওয়া হয় তাঁর ওয়েবসাইটি।
ভুক্তভোগী মিঞা মো. নুজহাতুল হাচান বলেন, “আমার একটি পত্রিকা ছিল স্টুডেন্ট জার্নাল নামের। ওই অফিসে মনিরুলের আপন শ্যালক রেজোয়ানুল আলম শাহীন ডিবি নিয়ে গিয়ে আমার অফিস তছনছ করে সব নিয়ে আসে।”
এ ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন নুজহাতুল। পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জননিরাপত্তা বিভাগকে।
নুজহাতুলের দাবি, তাকে না ডেকেই অভিযুক্তদের নির্দোষ বলে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি।
মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক বলেন, “তাকে (নুজহাতুল) যখন ডাকা হলো তিনি নিজে না এসে ইমেইলের মাধ্যমে জবাব দিলেন। এরপরে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাহলে কমিশন সরকারের কাছ শুধু প্রতিবেদন চাইতে পারে।”
এদিকে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অপরাধ করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে কাউকে আটক করে নির্যাতন বেআইনি।
মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান খান লেলিন বলেন, এই ধরনের নির্মম নির্যাতন এবং বাদ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করাটাই একটা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
এ ঘটনায় মনিরুলের বক্তব্য না পাওয়া গেলেও তার স্ত্রী ফারজানা বলছেন, ভুয়া কনটেন্ট বানিয়ে নানা সময়ে চাঁদা দাবি করেছেন নুজহাতুল। আর নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করেছে তৎকালীন ডিবি ডিসি।
ডিবি উত্তর জোনের সাবেক ডিসি কাজী সফিকুল আলম বলেন, “প্রশ্নই ওঠে না। নুজহাতুল আমার শ্যালক হয়। তার সঙ্গে আমার অনেক খাতির।”
এদিকে নানা ধরনের হুমকির মুখে এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন নুজহাতুল। জানাচ্ছেন, এখনো তার বিরুদ্ধে নানা থানায় হচ্ছে সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। আটকিয়ে রাখা হয়েছে তার পাসপোর্ট।