• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
রেমালের তাণ্ডব

জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবন, ভেঙেছে বাঁধ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৪, ০২:৩৫ এএম
জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবন, ভেঙেছে বাঁধ
আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে অনেকটা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপকূলের অনেক এলাকা। জোয়ার, জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেঙেছে বিভিন্ন জেলার উপকূলীয় বাঁধের অনেক স্থান। ঝড়ো হাওয়ার তোড়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুইজন।

রোববার (২৬ মে) দিবাগত রাতে উপকূলে আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। রাত ৮টার দিকে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র। ধেয়ে আসে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে।

ঝড়ের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বিভিন্ন এলাকার উপকূলীয় ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে ‍উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান জানান, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়। রেমালের বিস্তৃতি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।

বরিশাল নগরের নিম্নাঞ্চলসহ বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা ঘরবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক চলে গেছে পানির নিচে। বাগেরহাটে সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর থেকে পানি গড়িয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে সেখানকার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। অনেক জায়গায় মানুষের বসবাস করা ঘরেও পানি ঢুকে গেছে।

কক্সবাজারে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, উত্তর নুনিয়াছটাসহ অন্তত ২১টি গ্রাম। এসব গ্রামের হাজারো মানুষকে সবকিছু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে শহরের দিকে ছুটতে দেখা যায়। 
ঘূর্ণিঝড়ে প্রাথমিকভাবে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তাছাড়া ঝড়ের প্রভাবে হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে আমতলীসহ বিভিন্ন এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। মানুষের আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক হল ও কিছু হোটেল খুলে দেওয়া হয়। কক্সবাজারের নাজিরারটেকের ৭০০টি শুঁটকি মহালের মধ্যে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ৩০০টির বেশি মহাল।

ছুটি বাতিল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ সারা দেশের সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, রিমাল আঘাত হানতে পারে, এমন এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি রাখা হয়েছে। তাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, তবে ক্লাস হবে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, উপকূলীয় জেলাগুলোর ৯ হাজার ২২২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আট লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

Link copied!