আদালত অবমাননার দায়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোরশেদুল কবিরসহ পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের চার সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তাকে ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল কবির, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক-১ ওয়াহিদা বেগম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক-২ শ্যামল কৃষ্ণ সাহা এবং জেনারেল ম্যানেজার ফজলুল করিম ও ব্যাংকের প্রিন্সিপ্যাল শাখার বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার একেএম ফজলুল হক।
মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এ রায় দেওয়া হয়। আবেদনকারীদের আইনজীবী নুরুল আমীন বুধবার (২৪ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
নুরুল আমীন বলেন, “আদালত অবমাননার দায়ে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। বিস্তারিত তথ্য পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর জানা যাবে।”
এদিকে রায় স্থগিত চেয়ে ২৪ জানুয়ারি আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তাদের আইনজীবী শামীম খালেদ। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশায় ২২তলা মুন টাওয়ার নামে একটি ভবন নির্মাণ করা হয় অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২৩১ কোট ৪৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে। একপর্যায়ে ওই ভবনের ৯৮ হাজার ২৩৫ বর্গফুট (১২, ১৩ ও ১৪ তলা এবং ষষ্ঠ তলার ৫ হাজার বর্গফুট) কিনে নেয় অগ্রণী ব্যাংক। ঋণের বিপরীতে এ টাকা সমন্বয় করে ব্যাংকটি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বদলি হলে নতুন কর্মকর্তা এসেই মুন টাওয়ারের মালিকের কাছে ঋণের বিপরীতে ১৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা দাবি করে বসেন। এ টাকা পরিশোধ করতে ২০২১ সালে মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিঠি দেন ওই কর্মকর্তা। এ চিঠির বৈধতা নিয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা করেন মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান। কিন্তু ওই আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন মিজানুর রহমান। হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে ওই চিঠির জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে আদেশ দেন। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওই চিঠির কার্যকারিতার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন এবং ওই চিঠি কেন বাতিল করা হবে না এবং এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেওয়া হয়। এরপরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তথা বিবাদীপক্ষ টাকার জন্য মিজানুর রহমানকে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে মিজানুর রহমানের কাছে দাবি করা টাকাকে খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখানো হয়।
এরপর মিজানুর রহমান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক দুটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে আগের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিতে আরজি জানানো হয়। এরই মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলে আসে। এ নির্বাচনে মিজানুর রহমান জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়নে বরগুনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হন। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরগুনার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়ে মিজানুর রহমানকে ঋণখেলাপি হিসেবে উল্লেখ করেন।
এ চিঠি পাওয়ার পর মিজানুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে দেন জেলা প্রশাসক। অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তার ওই চিঠির বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আবেদন করেন মিজানুর রহমান। ওই তিন আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট ৫ ব্যাংক কর্মকর্তাকে সাজা দিয়ে মঙ্গলবার আদেশ দেন হাইকোর্ট।