বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “এ অবস্থায় যে কোনো নির্বাচনে আগে অবশ্যই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে খুনিদের বিচার, এ বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। আরেকটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার। এই দুইটা ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নিবে না।”
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজনে জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, “এবারের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বিনয়ের সঙ্গে বলব, আমরা নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, আমরা চুরি চামারি, কালো টাকার পেশি শক্তির প্রভাব যুক্ত নির্বাচন দেখতে চাই না। এই নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সমতল মাঠ তৈরি করতে হবে। এই দায়িত্ব পালনের জন্য আপনারা যতো সহযোগিতা চান, সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। বিচার আর সংস্কার এই দুটো করে অবশ্যই নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, “কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার বিপ্লবী জনগণকে কোনোভাবে দাবিয়ে রাখতে পারে না। তারা (আওয়ামী লীগ) তেমনি বাংলাদেশের বিপ্লবী জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারেননি। সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন, ত্যাগ এবং কোরবানি সব কিছুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের যুব সমাজের নেতৃত্বে তারা গদি ছাড়তেই শুধু বাধ্য হননি, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা বলি, এ দেশের সত্যিকারের দেশ প্রেমিক নাগরিক যারা, তারা কখনোই দেশ থেকে পালানোর চিন্তাও করে না। যারা দেশকে ভালোবাসেন, তারা দেশ ছেড়ে পালায় না। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা কানাডা, মালয়েশিয়ায় বেগম পাড়া গড়ে তোলে না। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করে না। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা জনগণের করের টাকায় কেনা অস্ত্র আর গুলি জনগণের বুকে তাক করে না। তারা সবই করেছে।”
শফিকুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশকে একটি জীবন্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। ভেতরের কারাগার থেকে বাইরের কারাগার ছিল আরও দুঃসহ। ভেতরের কারাগারে নতুন করে মামলা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। বাইরের কারাগারে থাকলে প্রতিনিয়ত বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী, আলেম ওলামা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মের লোকের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা চেয়েছিলেন, মামলা করে, হামলা করে, খুন করে, গুম করে, আয়না ঘরে বন্দী করে এই বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিবে। এভাবে মানুষ কে দাবিয়ে রাখা যায় না।”
সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, “বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা একটি দূরবর্তী বর্ডার এলাকা। এই বর্ডার এলাকায় দুই তিন দিন আগে, আমাদেরই এক সন্তান হাসিনুর রহমান, সে একজন অতি সাধারণ শ্রমিক ছিল। এক ভাই এক বোনের সংসার। সে গিয়েছিল গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে, সেখানে বুকের ওপর পা রেখে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। খুন করে তার লাশটি টেনে হেঁচড়ে ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করি সে কি মানুষ ছিল না? যারা হত্যা করেছে ওরা কি মানুষ নয়? কীভাবে তারা ঠান্ডা মাথায় সীমান্ত পেরিয়ে এখানে এসে মানুষকে হত্যা করতে পারে?”
শফিকুর রহমান আরও বলেন, “এটিতো একটি স্বাধীন দেশ। আমাদের বিজিবি যারা আছে, তারা কি ওই পারে গিয়ে এগুলো করে? কারণ আমরা তাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি এবং তাদের কে সম্মান দেখাই। সেই সম্মান টুকু বাংলাদেশের জনগণের পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা ৫৩ বছর সেই অধিকার পাইনি। আমাদের দাবিয়ে রাখা হয়েছে। আধিপত্যবাদের কালো ছায়া আমাদের ঘাড়ের ওপর ছিল। আমরা এ ছায়া আর দেখতে চাই না।”