মিথ্যাচার ও অপপ্রচারকারীদের বিপক্ষে চলচ্চিত্রের শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকসহ সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি বলেছেন, “শিল্পী ও নাগরিক সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সবাই অসত্যগুলোর প্রতিবাদ করুন।”
শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডের তথ্য ভবন মিলনায়তনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, “সরকার কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে, সরকারের কোনো ব্যর্থতা-বিচ্যুতি থাকলে অবশ্যই আপনারা তুলে ধরবেন, সমালোচনা করবেন, বিরোধিতা করবেন। কিন্তু যারা মিথ্যা কথা বলে, অর্ধসত্য বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, দেশকে আত্মঘাতী একটা অবস্থায় নিয়ে যাবে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে সব বিষয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঠিক তথ্য দেওয়া হবে।”
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ দেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছু কিছু গোষ্ঠী আছে যারা অপতথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধিতা থাকতে পারে, ভিন্ন মত থাকতে পারে। কিন্তু অসত্য কথা বলে, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করলে সেখানে শিল্পী সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির যারা আছেন তাদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করার আছে এবং আপনাদের কাছে এখানে কিছু অবদান আমরা চাই।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে সই করা সমঝোতা স্মারকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আরাফাত বলেন, “সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার শুরু হলো এবং যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু হলো, এসব জায়গাতে শিল্পী সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা তাদের সামগ্রিকভাবে দেশের এবং মানুষের স্বার্থে সত্যের পক্ষে অবদান রাখতে হবে। একটা সমাজে যদি সত্য হারিয়ে যায়, মিথ্যা যদি সামনে চলে আসে, তাহলে সেটা কারও জন্যই মঙ্গল নিয়ে আসবে না।”
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অপপ্রচারকারীরা বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতে ট্রেন চলে যাবে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এবং এখান দিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে চলে যাবে। বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। যেটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে।”
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, “সমঝোতা স্মারকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, একটা রিজিওনাল কানেক্টিভিটি আমরা করছি। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের ৫০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা আছে, রপ্তানি করি আমরা। বাংলাদেশের পণ্য ভারতের মধ্য দিয়ে গিয়ে নেপাল-ভুটানে প্রবেশ করে। আমরা যদি সরাসরি ট্রেন লাইন করতে পারি, তাহলে আমাদের ব্যবসা ও রপ্তানি প্রসার ঘটবে। সমঝোতা স্মারকে সেটিও আমরা নিয়ে এসেছি যে, নেপাল ও ভুটানে আমরা ভারতের মধ্য দিয়ে যাব।”
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভারতের গ্রিড লাইন ব্যবহার করে আমরা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে আসছি। এই মুহূর্তে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সমঝোতা হলেও নেপালে ৭২ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে, যেটা এখন তারা চাহিদা নেই বলে উৎপাদন করে না। কিন্তু আমাদের চাহিদা আছে। আমরা যদি নেপাল থেকে ক্লিন এনার্জি আমদানি করতে পারি, তাহলে আমরা জীবাশ্ম জালানির ব্যবহার কমিয়ে ক্লিন এনার্জি আনতে পারব। যেটা বাংলাদেশ, ভারত, নেপালপসহ গোটা পৃথিবীর জন্য ভালো, সেটা কীভাবে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়?”
চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রসঙ্গে আরাফাত বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান, প্রণোদনা দিতে চান। আমরা চাই, প্রণোদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভালো চলচ্চিত্র যাতে নির্মাণ হয়। এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যা কিছু করতে হয়, তা করব। অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা আরও স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে সংখ্যার চেয়ে গুণগতমানের দিকে মনোযোগ দিতে চাই। এজন্য বাছাই প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা হবে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিতদের প্রণোদনা দেওয়া হবে সেটি নয়, নতুনদের কাছে আমরা পৌঁছাতে চাই। তারা যাতে সুযোগ পেয়ে নিজেদের দাঁড় করাতে পারে।”