দুই নামের জটিলতায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মর্গে পড়ে আছে এক নারী সাংবাদিকের মরদেহ। তার নাম ‘বৃষ্টি খাতুন’ নাকি ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ এ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। শুধু তাই নয়, অভিভাবকত্ব নিয়েও বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। তাই শনিবার (২ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত তার লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। সবশেষ ডিএনএ পরীক্ষার পর অভিভাবকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ জুলাই ইস্যু করা জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বৃষ্টি খাতুন হিসেবেই রয়েছে। সেখানে বাবার নাম সবুজ শেখ এবং মাতার নাম বিউটি বেগম। কলেজের প্রবেশপত্রেও তার একই রকম তথ্য আছে।
২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর ইস্যু করা একটি জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম অভিশ্রুতি লেখা হলেও বাবার নাম লেখা হয়েছে মো. সাবুরুল আলম এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম।
অপরদিকে, চাকরির জন্মবৃত্তান্তে নিজের নাম ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ লিখেছেন তিনি। তবে, বাবার নাম লেখা হয়েছে সাবুরুল আলম এবং মায়ের নাম অপর্ণা শাস্ত্রী। জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং জন্ম বৃত্তান্তে জন্ম তারিখ ২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর রয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯৮।
মরদেহ নিতে আসা পরিবারের সদস্যরা জানান, তার আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া।
এদিকে অভিশ্রুতির আত্মীয় হারুন অর রশীদ দিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “বৃষ্টিকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল, সে হিন্দুধর্মের ছিল—এমন অনেক কথা এখন বলা হচ্ছে। তবে কখনোই তাকে দত্তক নেওয়া হয়নি। ডিএনএ পরীক্ষা হলে হবে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
বৃষ্টির ওরফে অভিশ্রুতির ফুফু রোজিনা আক্তার জানান, তিনি সাভারে থাকেন। বৃষ্টি তার সঙ্গেই সাভারে থাকতেন। যাতায়াতের দূরত্ব কমানোর চিন্তা করেই বৃষ্টি হোস্টেলে ওঠেন। এখন নাম জটিলতায় তার লাশটিও পেতে পরিবারের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে প্রশাসন থেকে জানিয়েছে।
বৃষ্টি ওরফে অভিশ্রুতির বাবা শাবলুল আলম সবুজ জানান, তিন বোনের মধ্যে বৃষ্টি বড়। তিনি লাশ বুঝে নিতে ঢাকায় রয়েছেন। রাতে লাশ দেওয়া হয়নি। ডিএনএ পরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বৃষ্টির লাশ নিয়ে তিনি কুষ্টিয়ার বাড়িতে ফিরবেন। সেখানে বৃষ্টির জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে আসছেন।
শাবলুল আলম সবুজ বলেন, “আমার মেয়ের প্রকৃত নাম মোছা. বৃষ্টি খাতুন। সে লেখালেখি করে- সেজন্য তাকে সবাই অভিশ্রুতি নামে ডাকে বলে সে জানিয়েছিল। বৃষ্টি ইডেন কলেজের দর্শন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।”
অভিশ্রুতির সাবেক কর্মস্থল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের চিফ রিপোর্টার গোলাম রাব্বানী গণমাধ্যমকে বলেন, “চাকরির বায়োডাটায় তার নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ছিল। এতে প্রমাণ হয়, সবুজ শেখই অভিশ্রুতির বাবা এবং বিউটি বেগমই তার মা।”
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের ২ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এই অগ্নিকাণ্ডে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অভিশ্রুতিও একজন।