বোরো বা আমনের মৌসুমে বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকার কারণে ধানের দাম পড়ে যায়। তখন উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। শুধু ধানই নয়, অন্যান্য মৌসুমি দানাদার ফসলের ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় উৎপাদনকারীদের।
প্রায় সারা দেশেই দেখা যায়, বোরো মৌসুম ধান কাটার পরপরই তা বিক্রি করে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় ধানচাষিদের মধ্যে। কারণ তখন ধান বিক্রি করেই সেচ, সার, জামি চাষের বিপরীতে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। এমন দুষ্টুচক্রের মধ্যে প্রতি বছর চাষিদের পড়তে হয়। যা থেকে উদ্ধার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে এমন দুষ্টুচক্র থেকে কৃষকদের রক্ষায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নির্মিত প্রায় ৮১টি গুদামে কৃষকরা ধান রেখে, তার বিপরীতে ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন খুব সহজেই। যা দিয়ে জমি চাষ বা সেচের বকেয়া খরচ সহজেই পরিশোধ করতে পারছেন তারা। এতে যখন ধানের পণ্যের ন্যায্য দাম ওঠে, তখন তা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি গুদামে থাকা ফসলের বিপরীতে এখন ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন কৃষকরা। গুদামে জমা থাকা ফসলের মূল্যের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত এই ঋণ নেওয়া যাচ্ছে। এতে অর্থের প্রয়োজনের সময় লোকসানে ফসল বিক্রির প্রবণতা থেকে কৃষকরা বেরিয়ে আসতে পারবেন। খবর টিবিএসের।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ‘শস্য গুদাম আধুনিকীকরণ ও ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের’ আওতায় মঙ্গলবার (১১ জুন) আয়োজিত এক ওয়ার্কশপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের পরিচালক ড. ফাতেমা ওয়াদুদ।
কৃষকদের এই শস্যঋণ প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের অক্টোবরে। চলবে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এরমধ্যে গুদামগুলোর আধুনিকায়ন করার কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশের ২৭ জেলার ৫৬টি উপজেলায় মোট ৮১টি গুদামের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কৃষকরা তাদের শস্যের পরিমাণের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারছেন।
প্রকল্পের পরিচালক ড. ফাতেমা ওয়াদুদ তার উপস্থাপনায় বলেন, “২০১৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ১৮৯ জন কৃষক ২০ হাজার ৩৭৭ টন শস্য জমা রেখেছেন। তারা ঋণ পেয়েছেন ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি।”
তথ্যমতে, প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার ১১৬ জন কৃষক পরিবার ৪ হাজার ৩ টন শস্য জমার বিপরীতে ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, “প্রকল্পটির মাধ্যমে ১৭ হাজার ৭১০ টন স্টোরেজ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যার মাধ্যমে নিশ্চিত হবে প্রতিটি গুদাম। আর এর সঙ্গে জড়িত কৃষকরা ২২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন।”