রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় থেকে লেখাপড়া করছিলেন চন্দ্রিমা চৌধুরী। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজবাড়ী থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেসে ওঠেন ২৮ বছর বয়সী চন্দ্রিমা। রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
চন্দ্রিমার খোঁজে বিভিন্ন হাসপাতালে হন্যে হয়ে ছুটছেন পরিবারের সদস্যরা। ট্রেনে আগুন লাগার আধঘণ্টা আগেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় তার। তবে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তার খোঁজ মেলেনি।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে চন্দ্রিমাকে খুঁজতে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে পুড়ে যাওয়া মরদেহ চেনার উপায় নেই। তাই ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান বলেন, “মরদেহ দেখে চেনার উপায় নেই। এখন পর্যন্ত পাঁচজন তাঁদের স্বজন নিখোঁজ বলে আবেদন জানিয়েছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে মরদেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।”
মরদেহ নিতে আবেদন করেছেন চন্দ্রিমার ভাই ডাক্তার দিবাকর চৌধুরী। তিনি জানান, তার বোন রাজবাড়ী থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকায় আসছিলেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। দিবাকর বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও আশপাশের হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে কোথাও বোনের সন্ধান মেলেনি।
এসময় চন্দ্রিমার ফুফাতো ভাই অনিন্দ্য পাল বলেন, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বেনাপোল এক্সপ্রেসে ওঠেন চন্দ্রিমা। এরপর বেশ কয়েকবার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। অগ্নিকাণ্ডের পর তার ফোন নম্বরে কল করা হলে তখন ব্যস্ত পাওয়া যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ রয়েছে, কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
অনিন্দ্য বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের সব হাসপাতালে আমরা খুঁজেছি। হাসপাতালের মর্গে গিয়েও তার খোঁজ পাইনি। পাগলের মতো আমরা তাকে খুঁজছি কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।’
রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত নয়টার দিকে চলন্ত ট্রেনটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যশোরের বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় ওই ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ এলাকায় থামানো হয়। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে গেছে।