বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “আমরা পুরো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে শুধু হাসিনা এবং গণভবনের পতন ঘটাতে পেরেছি। কিন্তু গণভবনের সঙ্গে রাষ্ট্র উপাদানের অন্যান্য যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোর বিলোপ ঘটাতে পারিনি। এই ভূখণ্ডের মানুষের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারিনি।”
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ ছাত্র তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনমত সংগ্রহ সপ্তাহ কর্মসূচি’বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
নতুন দল গঠনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আরেকবার এ দেশের মানুষের সামনে গাঠনিক মুহূর্ত হাজির হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের; বিশেষত, তরুণ জনগোষ্ঠীর নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্প তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো তা ধারণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে অভ্যুত্থানের শক্তি ছাত্র-তরুণরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হওয়া নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্পকে ধারণ করে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, “আমাদের এই রাজনৈতিক দলটি যেন নির্দিষ্ট একটি শ্রেণির না হয়, নির্দিষ্ট একটি আদর্শের না হয়ে যায়। এটি যেন সমাজের সব স্তরের কণ্ঠস্বর হয়, সেজন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যারা মনে করছেন দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়েছেন, আমরা তাদেরও প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমরা সব নাগরিকের কথা শুনতে চাই, আমরা সবার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে চাই।”
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাত্র-জনতার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছি। একইসঙ্গে আমরা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে হঠাতে সক্ষম হলেও আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী যে উপাদানগুলো রয়েছে, সেগুলোর সম্পূর্ণ বিলোপ ঘটেনি। গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের এক দফা ছিল ফ্যাসিবাদের বিলোপ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং সাম্য-মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ গড়ার জন্য এখনো আমাদের কাজটি অসমাপ্ত রয়ে গেছে।”
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, “এই ভূখণ্ডের মানুষ ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আমলে, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০-এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সবসময় একটি জুলুম এবং শোষণহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা মানুষ ব্যক্ত করেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের বিদ্যমান যে রাজনৈতিক কাঠামো এবং দলগুলো রয়েছে, তারা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে তারা গণমানুষের এই গণ-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”