• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গুলিস্তানে বিস্ফোরণ : ষড়যন্ত্র খুঁজছে আ.লীগ-বিএনপি


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
গুলিস্তানে বিস্ফোরণ : ষড়যন্ত্র খুঁজছে আ.লীগ-বিএনপি

সম্প্রতি নানা ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী রাজনীতি করলেও এবার গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে দোষারোপে জড়িয়ে পড়ছে রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি এবং টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। এককথায় বলতে গেলে, একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলে দোষারোপ করছে।

কোনো প্রমাণ ছাড়াই ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করে প্রতিদিনই বক্তব্য দিচ্ছেন দল দুটির নেতারা। শুধু তা-ই নয়, এসব ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র খুঁজছেন তারা। এর আগে কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরও একে অপরকে দোষারোপ করতে দেখা যায়। ফলে প্রকৃত অপরাধীদের অনেকেই পার পেয়ে গেছে। এবারও এমন আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, তদন্তের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই স্পর্শকাতর এ ইস্যুতে একে অপরকে দোষারোপ না করে এসব দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে তাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে গুলিস্তান, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিএনপি ঘটিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে সরকার। বুধবার (৮ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগর, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের এক যৌথ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের কাজে বাইরে, ঠিক সেই সময় দেশে কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেছে। এটা স্বাভাবিক দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা, সেটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারের পক্ষ থেকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথার প্রয়োজন নেই।”

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “মির্জা ফখরুল হুট করে একটা বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিবৃতিতে এ ধরনের একের পর এক ঘটনা রহস্যজনক বলা হয়েছে। আমরাও তার সঙ্গে একমত। এই সময়ে দেশে এ ধরনের ঘটনা রহস্যজনক। এই রহস্যের ভেতরের বিষয়টি কী, সেটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।” 

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, “যারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা নাশকতার পথ খুঁজছে কি না, নাশকতার পথে হাঁটছে কি না, সেটাও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এসব রহস্যজনক ঘটনার পেছনে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা দলের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “বিষয়টি সিরিয়াসলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে আগুন সন্ত্রাসে মেতে ওঠে। সেই সময় তারা ভাঙচুর অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। এ ব্যাপারে আমরা নিজেরা সতর্ক আছি, দেশবাসী ও জনগণকেও সতর্ক করছি।”

অপরদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “সরকারের ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতার কারণেই ঢাকা বিপজ্জনক নগরে পরিণত হয়েছে।”

বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে শুধু বিস্ফোরণ হচ্ছে। কীভাবে বিস্ফোরণ হচ্ছে? ভবনের যে নির্মাণকাজ, সেখানে নজরদারি নেই। সরকারের যে ডিপার্টমেন্টগুলো আছে, যাদের এসব ভবন দেখাশোনা করার কথা, যাদের নজরদারি করার কথা, তারা কাজ করে না, সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। ফলে এসব ভবনে নিরাপত্তা নেই।”

ফখরুল বলেন, “বিস্ফোরণ প্রতিরোধ ও আগুন প্রতিরোধ করার কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে আজ এই ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়ে সেখানে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, শতাধিক মানুষ আহত হচ্ছে এবং ঢাকা মহানগর এখন একটা বিস্ফোরন্মুখ নগরে পরিণত হয়েছে, বিপজ্জনক নগরে পরিণত হয়েছে।” 
মির্জা ফখরুলের সুরে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সিদ্দিকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাই শুধু নয়, আরও অনেকবার এ রকম ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই কারণ জনগণের তারা প্রতিনিধি নয়। এ সরকারের অবহেলা এবং ব্যর্থতার কারণে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাদের ব্যর্থতার কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়। তাদের উসকানিতে তাদের গুণ্ডা-পাণ্ডা দিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।”

এদিকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা অত্যন্ত সন্দেহের মধ্যে আছে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি বলেছেন, “এসব ঘটনায় কোনো নাশকতা থাকলে তা উদঘাটন করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার প্রস্তুত রয়েছে।”

বুধবার গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন রোগীদের শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে দেখতে আসেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। এরপর দলটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

মির্জা আজম বলেন, “সিদ্দিকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। কারণ পরপর কয়েকটি ঘটনা। একটি ঘটনা হলে দুর্ঘটনা হিসেবে মনে করা যেত। কিন্তু পরপর একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অতএব এটা অত্যন্ত সন্দেহের মধ্যে আছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের সাপোর্ট বা ক্যাপাসিটি আছে, সেই অনুযায়ী উদঘাটন করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।”

গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, “আমরা ধ্বংসস্তূপ পর্যবেক্ষণ করেছি। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটল, এটা তদন্ত করা দরকার। এটি স্বাভাবিক কেমিক্যাল বিস্ফোরণের ঘটনা নাকি অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড সেটা তদন্তের প্রয়োজন আছে। একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা অনেকগুলো প্রাণ হারিয়েছি। এটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর যারা বিশেষজ্ঞ আছে, তারা তদন্ত করে সঠিক ঘটনাটি বের করবে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কামাল উদ্দিন বলেন, “এখানে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং সাইন্সল্যাবে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এটা কীসের ইঙ্গিত, তা ভালো করে বোঝার দরকার। যে যেখানে আছেন, সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক কিছু দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।”

এদিকে বর্তমান সরকারের কাছে কোনো নির্ভরযোগ্য জায়গা নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, “রাজধানীর গুলিস্তান সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় যদি নাশকতামূলক কোনো উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা দ্রুত বের করে আনতে হবে।”

বুধবার দুপুরে শেখ হাসিনার বার্ন ইউনিটে দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

Link copied!