প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “১৯৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যা করার পর স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সবই মুছে গিয়েছিল। আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখকরা তাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে এ চেতনাকে ধরে রেখেছিলেন। আমরা রাজনীতিবিদরা রাজনীতির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলাম। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি।”
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের নির্বাচিত চিত্রকর্ম নিয়ে ‘১৯৭৩-২০২৩ রেট্রোস্পেকটিভ’ শীর্ষক বিশেষ শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মাসব্যাপী প্রদর্শনীতে চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা প্রায় ১৪০টি নির্বাচিত শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্মের প্রদর্শনীকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটি বাংলাদেশের প্রকৃতি, দেশের জনগণের অবস্থা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জনগণ, বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের সামনে তুলে ধরছে। জনগণ এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শিল্পীর অনুভূতি জানার পাশাপাশি তার অনেক দুর্লভ চিত্রকর্ম দেখার সুযোগ পাবেন।”
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই চেতনায় বাংলাদেশের মানুষ জাগ্রত হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে তারা আগামীতে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
এখন দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে আসতে শুরু করেছে, যা একটি বড় অর্জন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রদর্শনী পরিদর্শনের মাধ্যমে জনগণের হৃদয়ে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর চিত্রশিল্পী হিসেবে শাহাবুদ্দিন আহমেদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাসব্যাপী প্রদর্শনীর সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, “শাহাবুদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং মনে হয় তিনি এখনোএকজন মুক্তিযোদ্ধা; কারণ তার শিল্পকর্ম মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা ও চেতনাকে প্রতিফলিত করে, যা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করে।”
চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে সারা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন উল্লেখ করে এ সময় শিল্পীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তিনি প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলোও পরিদর্শন করেন। তিনি অনুষ্ঠানে ‘শাহাবুদ্দিন, এ রেট্রোস্পেকটিভ ১৯৭৩-২০২৩’ শীর্ষক বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক খলিল আহমেদ, চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অনুরাগ ও জাতির পিতার স্মৃতির কথা বর্ণনা করেন। কীভাবে বঙ্গবন্ধু তাকে স্বাধীনতার পর ফ্রান্সের প্যারিসে পাঠিয়েছিলেন, যা তার আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর ভিত্তি তৈরি করেছিল বলেও উল্লেখ করেন এই চিত্রশিল্পী।
সূত্র : বাসস