সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তাঝুঁকি না থাকলেও তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পূজা উদযাপনে মণ্ডপগুলোতে থাকছে পুলিশ, র্যাব, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী মোতায়েন। উৎসবমুখর পরিবেশে পূজার আয়োজনে সক্রিয়ভাবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোও।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “পূজা এবার নির্বিঘ্নে হবে। উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন থাকবে। সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসারসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ পূজামণ্ডপগুলোতে ইতোমধ্যে আট দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজামণ্ডপকে একটি সফটওয়্যারের আওতায় নিয়ে এসেছে জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি)। যার মাধ্যমে কোনো মণ্ডপে কী ঘটছে তা মিনিটের মধ্যে জানা যাবে। কেউ যেন কোনো ধরনের ‘গুজব’ রটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর থাকবে প্রশাসন। তাছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে গত ২ অক্টোবর নির্দেশনা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশের পূজামণ্ডপে প্রশিক্ষিত দুই লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন আনসার ও ভিডিপির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বেশি গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ৮ জন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মণ্ডপগুলোতে ছয়জন করে সদস্য থাকছে।
এ ছাড়া পূজামণ্ডপে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ১৫টি ব্যাটালিয়ন ও র্যাব হেডকোয়ার্টারের কন্ট্রোল রুম থেকে সারা দেশের পূজামণ্ডপ মনিটরিং করা হচ্ছে। মোবাইল টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সাদা পোশাকের সদস্যরা থাকবে। পাশাপাশি র্যাব ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিকভাবে মণ্ডপ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রমে অংশ নেবে। সীমান্তবর্তী বেশ কিছু বড় মন্দির রয়েছে। এসব ক্রস বর্ডারে আগে পূজায় উপস্থিতি অনেক বেশি হলেও এবার খানিকটা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলছেন, “পূজা ঘিরে দেশব্যাপী গত ৪ অক্টোবর থেকে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। যা বলবৎ থাকবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। র্যাবের সাইবার ইউনিট সার্বক্ষণিক সাইবার ওয়ার্ল্ড মনিটরিং করছে। গুজবের বিষয়ে র্যাবের কঠোর অবস্থান থাকবে।”
এবার পূজায় অপতৎপরতার চেষ্টা করলেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশপ্রধান। দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ৮ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সবাই নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন। আমরা মাঠে আছি।”
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কিছুটা অবনতি ঘটে। এবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব ঘিরে যেন এমন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য দুর্গাপূজাকে উৎসবমুখর করে তুলতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় কমিটি করা হয়েছে।
পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পাশে থাকবে। ঠিক একইরকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সংগঠনটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট প্রতিটি পূজা মণ্ডপে বিশেষভাবে নিয়োজিত আছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে তারা। এদিক থেকে আমরা শঙ্কামুক্ত আছি।”