পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে পরিবার নিয়ে জুবায়ের যাবেন সিলেটে। গত ২ জুন অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে, এক প্রকার যুদ্ধ করেই কেনেন জয়ন্তিকা ট্রেনের টিকেট। এরপর ভ্রমণের দিন যথাসময়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে আরও বিপাকে পড়েছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জুবায়ের বলেন, “ট্রেনের সময় বেলা সোয়া ১১টা, এখন বেজে গেছে দুপুর ১২টা। ট্রেন আসা তো দূরের কথা, বোর্ডে প্ল্যাটফরম নম্বরই দেয়নি। কখন আসবে তারও কোনো ঠিক নেই। এই সমস্যা শুধু ঈদের সময় না, অন্যান্য সময় বাড়িতে গেলেও একই রকম সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের বাড়ি স্টেশন থেকে দূরে। এই ট্রেনের শিডিউল ঠিক না থাকায় বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। তখন অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বাংলাদেশের রেলওয়ের এই সমস্যার দিকে দেখার কেউ নেই।”
বুধবার (১২ জুন) শুরু হয়েছে ঈদুল আজহা ঘিরে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা। শুধু তাই নয় একই সঙ্গে শুরু হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ‘স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস’। তবে ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ভোগান্তিও কিছু কম হয়নি।
সরেজমিনে রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, একক, পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবসহ দলে দলে স্টেশনে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা। স্টেশন চত্বরের বাইরে যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার্থে বাঁশ দিয়ে রাস্তা প্রস্তুত করা হয়েছে। দুই থেকে তিন স্তরে ট্রেনের টিকিট চেক করতে দেখা গেছে দায়িত্বশীলদের। তবে প্রথম দিনে যাত্রী কম আসতে দেখা গেছে স্টেশনে। কিন্তু ট্রেন সঠিক সময়ে না আসায় পুরো স্টেশনে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি দেখা যায় এ দিন।
জানা যায়, বুধবার এই স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছিল রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস। যা ছাড়ার কথা ভোর ৬টায়। কিন্তু এই ট্রেন ছেড়েছে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। শুধু ধূমকেতু এক্সপ্রেস নয়। কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ১০ মিনিটের পরিবর্তে ছেড়েছে ৬টা ৫০ মিনিটে, সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬টার পরিবর্তে ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৮টায়, কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্দুর প্রভাতি সকাল ৭টা ১৫ মিনিটের পরিবর্তে ছেড়েছে ৯টা ১৯ মিনিটে, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ৯টা ১০ মিনিটের পরিবর্তে ছেড়েছে ৯টা ৫৭ মিনিটে এবং দিনের প্রথম দেওয়ানগঞ্জগামী দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেন ৯টা ২৫ মিনিটের পরিবর্তে ছেড়েছে ১০টা ২৫ মিনিটে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টেশনে আসেনি।
ব্রাহ্মনবাড়িয়া যাবেন বলে স্টেশনে বসে আছেন মনিরা আক্তার। কথা হলে তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সময় মতো ট্রেন না আসায় যাত্রীতে ভরে গেছে, বসার জায়গা পাচ্ছি না। ট্রেনে মানুষ নিরাপদ মনে করে বিধায় যাতায়াত করে। কিন্তু দিন দিন ট্রেনের অবনতি হচ্ছে। ঠিকমতো ট্রেন পাওয়াই যায় না। সরকার কবে দেখবে এগুলো?”
আবু সায়েম নামের আরেক যাত্রী বলেন, “প্রথম দিনেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। অনেকক্ষণ ধরে স্টেশনে বসে আছি। কখন আসবে তার কোনো ঠিক নাই। ট্রেন দ্রুত এলে দ্রুত বাড়ি যেতে পারব, নয়তো পারব না।”
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, “ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনো ট্রেন দেরিতে আসে, তাহলে ট্রেনগুলো এখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যাবে। তাছাড়া ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পরে ক্লিনিং, ওয়াটারিং করতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগে।”