ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটির প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে উপচে পড়া ভিড় ছিল ঘরমুখী যাত্রীদের। নৌপথে গ্রামে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিতে হাজার হাজার যাত্রী বোঝাই লঞ্চগুলোও নির্দিষ্ট সময়ে ঘাট ছেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, পল্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়তে আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।
সকালে চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পল্টুনে দেখা যায় যাত্রীদের ভিড়। তবে রোদের তাপ বাড়ায় দুপুরের দিকে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল।
লঞ্চ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ঈদের মতো এবারও লঞ্চে কেবিনের চাহিদা বেশি। তবে অনেকে লঞ্চ ছাড়ার অনেকটা সময় পূর্বে ঘাটে আসলেও পাচ্ছেন না কেবিন। বাধ্য হয়েই অনেককে যেতে হচ্ছে ডেকে বসে।
পটুয়াখালীর যাত্রী রাসেল শিকদার বলেন, “ঢাকায় প্রচন্ড গরম। তাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ছি। এখন এসেছি কেবিন বুকিং দিতে। ভাড়া সামান্য বেশি দিয়ে কেবিন পেয়েছি। ঈদের সময় ভাড়া তো একটু বেশি নিবেই। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করবো, এই আনন্দটাই অনেক। যাত্রায় কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে আশা করছি।”
যাত্রাবাড়ী থেকে ভোলা যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে পরিবারসহ সদরঘাটে আসা আরিয়ান সুমন বলেন, “ঈদে সদরঘাটে চাপ কম থাকবে। এই আশায় কেবিন বুকিং করেছিলাম। তবে এসে দেখি প্রচন্ড ভীড়। অনেক কষ্টে বাচ্চা, বাচ্চার মাকে নিয়ে লঞ্চে উঠেছে। এখন ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারলেই হলো।”
মিরপুর থেকে আসা যাত্রী ওমর ফারুক বলেন, “ঈদে মানুষের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে থাকবেই। ঢাকার রাস্তায় জ্যাম ছিলোনা। কিন্তু সদরঘাটে এসে আটকে গিয়েছিলাম। রোজার মধ্যে অনেক কষ্টে খোঁজাখুঁজি করে লঞ্চ পেয়েছি।”
বাড্ডা থেকে আসা আসমা বেগম বলেন, “ঈদটা বাড়িতে কাটাতে ছেলে আর ছেলের বৌয়ের সঙ্গে বাড়ি যাচ্ছি৷ নাতি নাতনীদের সঙ্গে ঈদ করবো। বাড়িতে সবার সঙ্গে দেখা হবে। এটাই ঈদের আনন্দ।”
এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফ আমিরুল ইসলাম বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রী বেশ বেড়েছে। বেশিরভাগ কেবিনগুলো আগে থেকেই বুকিং দেওয়ায় খালি যাচ্ছে না।”
ভাড়ার বিষয়ে ভোলাগামী পারাবত-১৩ লঞ্চের পরিচালক শাহিন হোসেন বলেন, “আমাদের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির কোনো নির্দেশনা এখনও দেওয়া হয়নি। তাই আমরা নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি।”
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, “বরিশাল ও পটুয়াখালী রুটে ৮টি করে লঞ্চ ও অন্যান্য রুটগুলোতে কমপক্ষে ২-৩টি করে লঞ্চ যাবে। যাত্রী চাপ আছে, তবে আশানুরূপ নয়। অন্যান্য সময়ের তুললায় চার ভাগের এক ভাগ। কাল পরশু চাপ বাড়বে বলে আশা করছি। টিকিট কালোবাজারির রেওয়াজ অনেক পুরনো। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। তবে আমাদের কাছে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি।”
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেন বলেন, “লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। যাত্রী চাপ সামলাতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। যাত্রী হয়রানি, ভোগান্তি বা টিকিট কালোবাজারির কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক টার্মিনাল মনিটরিং করছেন।”
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান খান বলেন, “আজ যাত্রীর চাপ আগের থেকে বেড়েছে। পুলিশ, র্যাব সহ আনসার সদস্যরা যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। আমাদের নৌপুলিশ ঘাটে ও লঞ্চে উভয় স্থানে কাজ করছে।”