• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইসিটি ডিভিশনে চাকরি পেয়ে যা বললেন সেই ইডেন ছাত্রী


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম
আইসিটি ডিভিশনে চাকরি পেয়ে যা বললেন সেই ইডেন ছাত্রী

সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ‘চাকরি বয়স না থাকায় সার্টিফিকেট কোনো কাজে লাগছে না।’ এমন অভিযোগ তুলে নিজের সব অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পোড়ান ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মুক্তা সুলতানা। তার ছয় দিনের মাথায় সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) একটি প্রজেক্টে চুক্তিভিত্তিক চাকরি পান ওই শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (৩০ মে) থেকে চাকরিতে যোগদান করবেন বলে মুক্তা সুলতানা সংবাদ প্রকাশের এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ মে) ইডেন কলেজের সামনে মুক্তা তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সার্টিফিকেট পোড়ান তিনি। ওই শিক্ষার্থীর দাবি, সরকারি-বেসরকারি চাকরি করতে এসব সার্টিফিকেট কোনোই লাগছে না। সেই লাইভটি সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়টি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দৃষ্টিগোচর হলে, পরে মুক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রতিমন্ত্রী। সেইসঙ্গে তার দপ্তরে আসার জন্য অনুরোধ জানান। সোমবার (২৯ মে) আইসিটি ডিভিশনে এলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তাকে ছায় মাসের চুক্তিভিত্তিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব সিকিউরড ই-মেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ প্রজেক্টে ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। এই চাকরিতে তার বেতন ৩৫ হাজার টাকা।

এদিকে প্রতিমন্ত্রীর এক ফেসবুক পেজ লাইভ প্রচারিত হয়। যেখানে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে মুক্তা সুলতানার যে উপলব্ধি, পরামর্শ, তার সেই আবেগের আমরা যেমন শ্রদ্ধাশীল, তেমনি তার সংগ্রামী জীবন আমাদের বেশ উৎসাহী করেছে। জানতে পারলাম মুক্তা সুলতানা কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায়, যখন সে অষ্টম শ্রেণিতে তখন তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তখন সে প্রতিবাদ করেছিল, যেন অপ্রাপ্ত বয়সে তাকে বিয়ে না দেওয়া হয়। ২০০৩ সালে তার বাবা মারা যায়। এরপর পরিবারে ভাই-বোনদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সে ঢাকা এসেছে, নিজেও পড়াশোনা করেছে। এমনকি পরিবারও চালিয়েছে। অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে এত দূর এসেছে। এই যে, একজন আদর্শ সংগ্রামী জীবনের গল্প আমরা পেয়েছি, এ গল্প যেন হারিয়ে না যায়।”

তিনি আরও বলেন, “মুক্তা সুলতানা এই তরুণ বয়সে কিন্তু উপলব্ধি করেছে আমাদের সনদমুখী হওয়া উচিত না। আমাদের কর্মমুখী ও দক্ষতা নির্ভর হওয়া উচিত। সে তার আবেগ থেকে তার সার্টিফিকেটগুলো হয়ত পুড়িয়েছে। আমরা তরুণ বয়সে তার এই আবেগকে শ্রদ্ধা রাখি, তবে এর সঙ্গে সে কিন্তু ইন্টারভিউতে এ কথাও বলেছে যেন কেউ হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে না নেই, যেন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। আর সেই সংগ্রামী জীবনকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আইসিটি ডিভিশনে ছয় মাসের কন্ট্রাকচুয়াল কাজ করবে।”

এদিকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কথা হয় মুক্তা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আমার ভিডিওটি দেখার পর তিনি আমাকে মন্ত্রণালয়ে আসার কথা বলেন। তিনি কিন্তু ৩৫ প্রত্যাশী আন্দোলনের ইস্যুতে আমাকে চেনেন না, তিনি আমাকে চিনেছেন সার্টিফিকেট পোড়ানোকে কেন্দ্র করে। আসলে কেন সার্টিফিকেট পোড়ালাম, এ বিষয়ে জানতে চান। তার সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা হয়। এসময় ৩৫ প্রত্যাশী আন্দোলনের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবিও তুলে ধরি। আমি প্রায় ২ ঘণ্টা কথা বলেছি, বয়সসীমা বৃদ্ধি প্রসঙ্গেই যাবতীয় আলোচনা হয়েছে। তিনি আমার বয়সসীমা বৃদ্ধির যুক্তিগুলো শুনে বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তার ফোন দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ভিডিও বার্তা তার (স্যারের) অডিও বার্তা সংযুক্ত করে পৌঁছে দিয়েছেন এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে ক্যাবিনেটে আলোচনা করবেন পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করবেন বলে কথা দিয়েছেন।”

মুক্তা সুলতানা আরও বলেন, “এটা কিন্তু সরকারি চাকরি না। এটা একটা ছয় মাস মেয়াদি কন্ট্রাকচুয়াল জব। প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সামনেই বলেছি, চাকরি করার পর আমার যতটুকু সময় থাকবে, আমি আন্দোলনে সময় দেব। তাছাড়া এই আন্দোলনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। আমি বলেছি এটা এক ধরনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। এ আন্দোলনে কখনো ভাঙচুর কিংবা বিশৃঙ্খলা হয়নি।”

চাকরি যোগদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ আমি অবশ্যই জয়েন করব। তাছাড়া চাকরিতে জয়েন করার পাশাপাশি আমি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

কবে থেকে যোগদান করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে মুক্তা সুলতানা বলেন, “আগামীকাল থেকেই চাকরিতে জয়েন করছি।”

Link copied!