• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৯ লাখ টাকা খরচ করে আয় ৩৬০ টাকা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ১১:১৫ এএম
৯ লাখ টাকা খরচ করে আয় ৩৬০ টাকা

কৃষিপণ্যের দাম কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর অংশ হিসেবে কম খরচে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষিপণ্য পৌঁছে দিতে বিশেষ ট্রেন চালু করেছে রেলওয়ে। 

শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন থেকে এমন একটি কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন ছেড়েছে। 

রাজশাহী পর্যন্ত ৫টি স্টেশনে সবজি নেওয়ার জন্য এ ট্রেন থামলেও কোনো কৃষিপণ্য তোলা হয়নি। শুধু রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ডিমের ১৫০ কেজি ফাঁকা খাঁচি তোলা হয়। অথচ এই রুটে ট্রেনটি চালাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের খরচ প্রায় ৯ লাখ টাকা।

কৃষিপণ্য পরিবহনে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে এই ট্রেনে। ট্রেনে ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ আসন রয়েছে। 

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, বিনা ভাড়ায় তারা এই ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। এই ট্রেনে সাধারণ লাগেজ ভ্যানের পাশাপাশি রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে মাছ, মাংসসহ পচনশীল পণ্য পরিবহন করা যাবে। রহনপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি পণ্যের ভাড়া পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা।

তবে কৃষকেরা এতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কারণ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙাবাড়ীর বাসিন্দা সবজিচাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাক-পিকআপের চেয়ে ট্রেনের ভাড়া কম। কিন্তু ট্রেনে পণ্য পরিবহন করতে কুলি খরচ, ফসলের মাঠ থেকে স্টেশন এবং স্টেশন থেকে মোকামের আলাদা পরিবহন খরচ পড়ে যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৩ টাকার বেশি। অথচ সড়কপথে ট্রাকে মাল পরিবহন করতে কেজিপ্রতি দুই থেকে আড়াই টাকা খরচ পড়ে।’

একই এলাকার কৃষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনের সময়সূচি সকালে হওয়ায় পণ্য বাজারজাত নিয়েও রয়েছে নানা শঙ্কা। সড়কপথে সবজি নিয়ে সন্ধ্যায় যাত্রা শুরু করে পরদিন ফজরের আজানের সময় ঢাকায় পৌঁছেই বাজার ধরতে পারি। কিন্তু এই ট্রেনের সময় সকালে হওয়ায় সবজির বাজার ধরা অসম্ভব।’

যেভাবে চলবে ট্রেন
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ এই ট্রেনটি সপ্তাহের মঙ্গলবার খুলনা থেকে ঢাকা, বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় থেকে ঢাকা এবং শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকা রুটে চলাচল করবে। শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে নাচোল, আমনুরা জংশন, রাজশাহীর কাঁকনহাট, রাজশাহী সদর, সরদহ রোড, আড়ানি, নাটোরের আব্দুলপুর, আজিমনগর, পাবনার ঈশ্বরদী বাইপাস, চাটমোহর, বড়ালব্রিজ ও জয়দেবপুর হয়ে ঢাকা পৌঁছাবে বিশেষ এই ট্রেনটি।

উঠল শুধু ডিমের খালি খাঁচি 
কৃষি স্পেশাল এই ট্রেন শনিবার সকাল পৌনে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে রহনপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। এই স্টেশন থেকে কোনো পণ্য ওঠেনি বলে জানান স্টেশনমাস্টার মামুনুর রশিদ। 

রাজশাহীতেও এই ট্রেনে কোনো সাড়া মেলেনি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে শুধু ডিমের ১৫০ কেজি ফাঁকা খাঁচি তোলা হয় কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনে। এ থেকে রেল কর্তৃপক্ষ ৩৬০ টাকা ভাড়া আদায় করে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ট্রেন সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন না। যদিও রেল কর্মকর্তাদের দাবি, যথেষ্ট প্রচার চালালেও ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ভবিষ্যতে চাষিদের সাড়া মিলবে বলে আশা তাঁদের।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর পাইকারি কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি ফাইজুল ইসলাম বলেন, “ট্রেনে অল্প খরচে সবজি পরিবহন করা গেলে অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো হবে। তবে ট্রেনটি যে চালু হবে, সেটি আমরা জানি না। জানলে হয়তো কিছু মাল পাঠাতে পারতাম।” 

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক শহিদুল আলম বলেন, “কেবল ট্রেনটির উদ্বোধন হলো। রাজশাহী থেকে কোনো সবজি বুকিং হয়নি। তবে ডিমের ১৫০ কেজি খালি খাঁচি তোলা হয়েছে।”

ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের মাস্টার পাভেল হোসেন জানান, এ স্টেশন থেকেও কোনো কৃষিপণ্য বুকিং হয়নি। একই রকম তথ্য জানিয়েছেন সরদহ রোড, আড়ানি, আব্দুলপুর, আজিমনগর ও চাটমোহর স্টেশনের মাস্টাররা। এসব স্টেশনে কিছু সময়ের জন্য ট্রেনটি অপেক্ষা করেছিল।

ট্রেন চালানোর খরচ ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে পাকশী রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা এ কে এম নুরুল আলম বলেন, “যাদের ট্রেনে যাওয়া উপকার হবে, তারা ঠিকই যাবে। এ ট্রেন কৃষকের স্বার্থে করা হয়েছে। লোকসান হলেও কিছু করার নেই। এর আগে তো একইভাবে ম্যাঙ্গো স্পেশাল কিংবা ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন চলেছে।”

 

Link copied!