রাজধানীর সড়কে যানজট ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে গণপরিবহনে শুরু হয় ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। উদ্দেশ্য ছিল দূরত্ব অনুযায়ী বাস ভাড়া নিশ্চিতকরণ, নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠানামা করা এবং এক বাসের সঙ্গে আরেকটির রেষারেষি বন্ধ করা। ই-টিকিটিংয়ের আওতাধীন বিভিন্ন রুটে বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য সাময়িক সময়ে কমলেও নানা অজুহাতে এখনো ই-টিকিটিংয়ের সেই মেশিন এখন অকার্যকর। প্রতিটি মেশিনে হয় চার্জ থাকে, না হয় শুধু বাসের সহকারীর গলায় ঝুলে থাকে।
রাজধানীর প্রধান কয়েকটি রুট ঘুরে দেখা যায়, যে কয়েকটি কোম্পানির গণপরিবহনে ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোতে একই অবস্থা। প্রায় বাসেই ই-টিকিট মেশিনে চার্জ নেই। আবার কেউ শুধু গলায় ঝুলিয়ে রাখে, ব্যবহারে গুরুত্ব নেই।
বাস সহকারী ও চালকদের অভিমত, যাত্রীদের তাড়াহুড়োয় টিকিট কাটা হয় না। গাড়িতে চার্জ দেওয়ার কোনো সিস্টেম না থাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ থাকে।
দেখা গেছে, কাগজে-কলমে ই-টিকিট ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তব চিত্র পুরোপুরি আলাদা। বাসের অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়নি। ই-টিকিটের আওতায় আসা নগরীর অর্ধেকের বেশি বাসে ভাড়া নিয়ে মেশিন থেকে সমমূল্যের টিকিট যাত্রীর হাতে দিতে পরিবহন শ্রমিকদের অনীহা দেখা যায়। ফলে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করার প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে স্টাফকোয়ার্টার যায় স্বাধীন পরিবহন। এই পরিবহনেও ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও পোজ মেশিনে চার্জ না থাকায় দিনের বেশির ভাগ ড্রাইভারের কাছে জমা থাকে। ফলে সারাদিনে সে আগের নিয়মে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া কাটে।
বাসের হেলপার মোজাম্মেল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই মেশিনে চার্জ কম থাকায় মেশিনে ভাড়া কাটা সম্ভব না হচ্ছে না।”
সরজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ বাসে ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা কার্যকারিতা নেই। আবার কোনো কোনো বাসে চার্জ না থাকার অজুহাতে মেশিন থাকে বাসায়। এমন অজুহাতে যাত্রীদের কাছে আগের নিয়মে অতিরিক্ত ভাড়া কাটছে বাসগুলো।
এদিকে বাসযাত্রীদের অভিযোগ, বাসের সহকারীরা নানা অজুহাতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা মানতে চায় না। অধিকাংশ সময় তারা বলে মেশিনে চার্জ থাকে না। আবার কোনো কোনো বাস সহকারী বলছে, সার্ভারে সমস্যা থাকায় মেশিন বন্ধ। এইভাবে চলছে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসার ই-টিকিংটিংয়ের বর্তমান অবস্থা।
সরজমিনে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত আনিছুল ওই দিন ১৫ টাকা পরিশোধ করে ই-টিকিট নেন। ঠিক এর তিন দিন পর ২৮ মার্চ আনিছুল ইসিবি চত্বর থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক (নর্দ্দা) পর্যন্ত যান অছিম পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের বাসে। এদিন তিনি কোম্পানিটির কর্মীকে ১০ টাকা পরিশোধ করে ই-টিকিট কেনেন।
আনিছুল হক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “যদি ই-টিকিটের মাধ্যমে ভাড়ার নৈরাজ্য বন্ধ করা হয়ে থাকে, তাহলে একই দূরত্বে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন দেখা যায় কেন? ই-টিকিটিং বা ইলেকট্রনিক টিকিটিং ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট দূরত্বের জন্য একই ভাড়া হওয়ার কথা। যে কোম্পানিরই বাস হোক না কেন, ডিভাইসে একই গন্তব্য দেওয়া মাত্রই তো একই ভাড়া নেওয়ার কথা। সেটা তো হয় না।”
ই-টিকিটিএর বর্তমান অবস্থা নিয়ে মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ই-টিকিটিং নিয়ে আমরা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছি। এটি নিয়ে যাত্রীদের এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি।”
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, “আমরা বেশ কয়েকবার ই-টিকিটিং কার্যক্রম নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। যাত্রীদের অনেক অভিযোগ পেয়েছি তখন। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি। আশা করি দ্রুত নগরবাসী গণপরিবহনে ই-টিকিটিং সার্ভিসের সুফল ভোগ করবে।”
ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির চালু করা ই-টিকিটিং ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মুখপাত্র ও রোড সেফটি উইংয়ের পরিচালক শেখ মাহবুব-ই-রাব্বানি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ই-টিকিটিং ব্যবস্থা বাস কোম্পানিগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এখানে বিআরটিএর কোনো সিদ্ধান্ত বা অংশগ্রহণ নেই। আমরা ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ করে দিই। এরপর কোম্পানিগুলো যে পদ্ধতিতে তাদের সুবিধা, সে পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করবে। বিআরটিএ মনিটরিং করবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, সেটা ই-টিকেটিং হোক আর ম্যানুয়াল। আমাদের কাছে যাত্রীদের লিখিত অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”