রপ্তানি মূল্য পরিশোধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশি ডেভেনহ্যাম ভেন্ডরসদের সংগঠন ডেভেনহ্যাম ভেন্ডরস কমিউনিটি (ডিভিসি)| এই দাবিতে এক্সপো ফ্রেইট লিমিটেডকে (ইএফএল) ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ৩৬টি পোশাক কারখানা মালিকদের এ সংগঠন।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
সংবাদ সম্মেলনে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “যুক্তরাজ্যভিত্তিক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ডেভেনহ্যামের কাছে আমরা বাংলাদেশের প্রায় ৩৬টি কোম্পানি পোশাক সরবরাহ করেছি। যেহেতু এটি যুক্তরাজ্য এবং আশপাশের দেশগুলোর একটি অন্যতম স্বনামধন্য কোম্পানি ছিল, তাই আমরা বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করেছিলাম। শর্তানুযায়ী রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার এবং রপ্তানি মূল্য আদায়ের পর আমরা তাদের মনোনীত ফরোয়ার্ডার এক্সপো ফ্রেইট লিমিটেডের (ইএফএল) কাছে Bill of lading প্রদান করে থাকি। আমরা এক দশক ধরে এই ভাবে আমাদের দেশীয় পণ্য রপ্তানি করে আসছি।
কোভিড মহামারির শুরুতে ডেভেনহ্যাম পিএলসি তাদের দেউলিয়াত্বের জন্য ইউকে আদালতে আবেদন করে এবং আদালত প্রশাসক নিয়োগ করে। তখন আমরা বাংলাদেশি বিক্রেতারা একত্র হয়ে ডেভেনহ্যাম ভেন্ডরস কমিউনিটি নামের একটি সংগঠন গঠন করি। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পারস্পরিক আলোচনা, যোগাযোগ, বকেয়া আদায়ের পাশাপাশি বন্দর ও ট্রানজিটে পড়ে থাকা পণ্যের ব্যাপারে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেওয়া।
মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ডেভেনহ্যাম দেউলিয়া হওয়ার কারণে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মোট ক্ষতির পরিমাণ বের করি, যা ছিল প্রায় ৭০.৪৮ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্য এবং রপ্তানির প্রক্রিয়াধীন পণ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিভিসির পক্ষ থেকে ডেভেনহ্যামের প্রশাসকের কাছে আমরা আমাদের দাবি উপস্থাপন করি এবং বকেয়া আদায়ের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে আলোচনা করি এবং পোর্টে পড়ে থাকা ও পরিবহনে থাকা পণ্য আলোচনার মাধ্যমে প্রশাসিকের নিকট বিক্রয়ের ব্যবস্থা করি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সপো ফ্রেইট লিমিটেড (ইএফএল) আমাদের ব্যাংক কর্তৃক Bill of Lading এনডোর্সমেন্ট ছাড়াই ডেভেনহ্যামকে আমাদের পণ্য অনিয়মিতভাবে সরবরাহ করে দেয়। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতির নির্দেশিকাগুলির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইতিমধ্যে আমরা ডেভেনহ্যাম মনোনীত ফরোয়ার্ডার ইএফএল এবং তাদের বাহক Maersk Line, Hapag LIoyd, GBX, BLPL, TPL, Sky Ways Limited এবং অন্যদের পাওনা আদায়ের জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। আইনি নোটিশ প্রদানের পর Maersk Line এবং EFL ডিভিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং Maersk Line দ্বারা বহনকৃত পণ্যের জন্য FOB মূল্যের ৭০ শতাংশ দিতে সম্মত হয়। সেই অনুযায়ী আমরা ৫.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি অনুযায়ী পেমেন্ট পেয়েছি। এখনও মোট বকেয়া রয়েছে প্রায় ১০.২১ মিলিয়ন ডলার।
ইতিমধ্যে আমাদের কাঁচামাল সরবরাহকারীদের সব ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি মূল্য পরিশোধযোগ্য হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক আমাদের হিসাবে ফোর্স লোন সৃষ্টি করে বিল পরিশোধ করে। তাছাড়া ব্যাংকগুলো আমাদের অনেকের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা দেওয়া সীমিত করে দিয়েছে। সর্বোপরি আমরা ইডিএফ সুবিধা, নগদ প্রণোদনা এবং অন্যান্য ব্যাংক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।
আমরা ইএফএলের সঙ্গে আবারও আলোচনা করি কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। তারা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ এবং আমাদের কোম্পানির ১ লাখের বেশি শ্রমিকের জীবনের বিষয়টি আমলে নেয়নি। ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল, আমরা ইএফএল এবং সব ক্যারিয়ারকে আবারও আইনি নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা এখনও আমাদের পাওনা পরিশোধ থেকে বিরত আছে।
আর এই খারাপ পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ কারখানা এখন বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে এবং শ্রমিকদের মজুরি নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না। এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং অন্যদের অবহিত করতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি এবং আমরা যদি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রপ্তানিমূল্য না পাই, তবে বেশির ভাগ কারখানা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের বিলম্বের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে এবং হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। শ্রমিকরা তাদের বেতন না পেলে ইএফএল অফিস ঘেরাওয়ের হুমকি দেন।
আমরা ইএফএলকে আর সময় দেওয়ার অবস্থানে নেই। কারণ, বেশির ভাগ কারখানাই শ্রমিকদের বেতন প্রদান করতে পারছে না। তাই আমরা তিনটি দাবি জানাচ্ছি।
১. ইএফএল এবং অন্যান্য ক্যারিয়ারদের ১৫ দিনের মধ্যে অর্থ প্রদান করতে হবে।
২. তারা ব্যর্থ হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
৩. আমরা সমস্ত গার্মেন্টস কোম্পানি থেকে ইএফএলকে ঘেরাও করতে বাধ্য হবো।