• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩০, ৩০ রজব ১৪৪৬

জুলাই বিপ্লবীদের হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না : মাহফুজ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম
জুলাই বিপ্লবীদের হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না : মাহফুজ
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ফাইল ফটো

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, “জুলাই বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে ছাত্র নেতৃত্বে সর্বজনের অভ্যুত্থান। মধ্যপন্থি ও ভবিষ্যতমুখী এ অভ্যুত্থানে ডান-বাম, চরম বা নরম পন্থার আশ্রয় নেই। সুতরাং, বাইরের আশকারায় কেউ জুলাই বিপ্লবীদের ট্যাগ বা হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না, বরং জুলাই বিপ্লবীদের সঙ্গে মৈত্রী করুন।”

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহফুজ আলম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পর কী হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা করুন। ইতিহাস পর্যালোচনা করুন। কোনো সমস্যা নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কী কী ঘটেছে, তা নিয়েও তর্ক উঠতে পারে। কিন্তু, সেসবই হবে মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে। যেমন, শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে আমরা বলব। উনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু, বাংলাদেশের জন্মে অনেক জাতীয় নেতৃত্বের মতো ওনার অবদান অনস্বীকার্য। তাই, আমরা ‘৭২ পূর্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেবো।”

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ ফ্যাসিস্ট হতে পারেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল আপামর জনগণের লড়াই। মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের ফ্যাসিস্ট, ইসলামফোবিক ও খুনি হয়ে ওঠার কারণে আপনি খোদ মুক্তিযুদ্ধ বা সব মুক্তিযোদ্ধাদের অস্বীকার কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। এটা রাষ্ট্রের ভিত্তির সঙ্গে গাদ্দারি।”

মাহফুজ আলম বলেন, “আমরা ভুলে যাই, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ১০ বছরের ইতিহাস ছিল, ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতবিরোধী, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার লড়াইয়ের ইতিহাস। কিন্তু, সেজন্য আধিপত্যবাদবিরোধী কোনো মুক্তিযোদ্ধা খোদ মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার দুঃসাহস করেননি। এখানেই পিকিংপন্থিদের সঙ্গে অন্যদের তফাত। এ দেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও বাংলাদেশের জন্মকে স্বীকার করেই এ দেশে রাজনীতি করতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় হলে আপনাদের আমরা বাংলাদেশের পক্ষের, গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে মেনে নেব না। আর, এ গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধের পরে ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, বাকশাল ২.০ এর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেরই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা। এ গণঅভ্যুত্থানে বরং শেখ পরিবার ও মুজিববাদী প্রকল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধ রিক্লেইমড হলো।”

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশপন্থিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থি হতে হবে, তবে এটাও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাঁবেদার হয়ে উঠেছিলেন। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারাও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য। জুলাই সুযোগ নিয়ে এসেছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। লীগের বিচারকার্য সম্পন্ন করে রিকন্সাইল করতেও আমরা আগ্রহী ছিলাম। অথচ, দিল্লীর আশ্রয়ে থেকে দেশবিরোধী চক্রান্ত করাকেই তারা বেছে নিল। আপনারাও ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। জাতিকে বিভাজন থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই  ’৭১ ও ’২৪ কে নিঃশর্ত ও নিরঙ্কুশ মেনে এগোতে হবে।”

মাহফুজ আলম বলেন, “পুনশ্চ জুলাই বাংলাদেশের ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে ছাত্র নেতৃত্বে সর্বজনের অভ্যুত্থান। মধ্যপন্থি ও ভবিষ্যতমুখী এ অভ্যুত্থানে ডান-বাম, চরম বা নরম পন্থার আশ্রয় নেই। সুতরাং, বাইরের আশকারায় কেউ জুলাই বিপ্লবীদের ট্যাগ বা হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বরং, জুলাই বিপ্লবীদের সঙ্গে মৈত্রী করুন।”

মাহফুজ আলম আরও বলেন, “জুলাই গণের লাইনে আছে, ইতিহাসের পক্ষে আছে, আপনারা জুলাইয়ের ছাত্র নেতৃত্বকে হুমকি দেওয়া ব্যক্তিরা ইতিহাসের উল্টোদিকে হাঁটছেন। আসুন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখি এবং রাষ্ট্র সংস্কার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই মিলে অংশগ্রহণ করি।”

Link copied!