গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে দল আপাতত মাথা ঘামাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেছেন, “আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন দেশবাসীর জন্য, আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ হওয়ার জন্য সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয় টিমের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সোমবার (১ মে) গাজীপুরে এক সভায় আওয়ামী লীগের সমন্বায়ক টিমের সদস্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেছিলেন, “জাহাঙ্গীর আলম যদি নৌকার পক্ষে কাজ না করে, তৃণমূলের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী শেখ হাসিনা তাকে আজীবন বহিষ্কার করতে পারেন। তিনি নৌকাকে সমর্থন না করলে জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্রকারীদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে বলে আমি মনে করি।”
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিটিংয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করতে চাই। কেউ যাতে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন দেশবাসীর জন্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার জন্য সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “গাজীপুরের ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখের কাছাকাছি, ৯টি থানা, ৪৮০টি কেন্দ্র ও ৫৭টি ওয়ার্ড। একটা বিশাল এলাকা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে গেলে বিশাল কর্মী বাহিনী দরকার। তাই গাজীপুরে সর্বস্তরের জনগণ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের সকল মানুষকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই। ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা জয়লাভ করতে চাই। সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও আগুন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে কেউ যেন নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেজন্য কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন পরিচালনার জন্য সেখানে আমাদের একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকবে। সেখান থেকে নির্বাচন পরিচালনা করব। নির্বাচন পরিচালনার জন্য থানাভিত্তিক কমিটি হবে। ভোটকেন্দ্র ভিত্তিকও কমিটি হবে। স্তরে স্তরে কমিটিগুলো সাজাব। ৪৮০টির মধ্যে বেশিরভাগ কমিটি হয়ে গেছে। আগামী ৯ তারিখের আগে নির্বাচনের সব কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। প্রত্যেকে যেন ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে চাই। আশা করি নৌকার বিজয় হবে।”
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে গাজীপুর সিটির তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর জেরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। পরে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার টিকিটে নির্বাচিত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত হন। সেই আদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি।
এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সাল) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির (প্রয়াত) নেতা এম এ মান্নান। এবারের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।