“একজন মানুষের উচ্চতা ৩-৪ হাত হলেও সবাই পুড়ে ১-২ হাত হয়ে গেছে। জানি না আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই।” এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে আর্তনাদ করে কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের আবদুল হক।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশে ছেলে আবু তালহাকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাতে রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পাওয়ামাত্র ঢাকায় ছুটে এসে ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আবদুল হক।
আবদুল হক বলেন, “আমার ছেলে সৈয়দপুরের বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে থার্ড ইয়ারে পড়ে। তার বয়স ২৪ বছর। আমার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে। বর্তমানে ফরিদপুরে থাকি।”
তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে ফরিদপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছি। সে ঢাকা হয়ে সৈয়দপুরে যাবে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাতে ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরপরই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছি। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি, সেখানেও যায়নি। তার টিচাররাও তাকে খুঁজছে। আমি রাতেই ঢাকা আসি। ঢাকায় এসে প্রথমে যাই মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে তাকে খুঁজে পাইনি। এরপর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেও আমার ছেলের খোঁজ পাইনি। তারপর আসি এখানে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ মর্গ)। এখানে চারটি মরদেহ রয়েছে।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবদুল হক বলেন, “এখানে প্রথমে আমাকে মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে দেখেছি। কিন্তু চিনতে পারছি না। একজন মানুষের উচ্চতা ৩-৪ হাত হলেও সবাই পুড়ে ১-২ হাত হয়ে গেছে। জানি না আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই।”
রেলওয়ে পুলিশের উপরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান বলেন, এখানে ৪টি মরদেহ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪টি পরিবার সন্ধান চেয়েছে। সন্ধান চাওয়ার জন্য আরও অনেকে আসছে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া এ আগুনে চারজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।