সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রিত গৃহকর্মীদের যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের দায়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সচিব মো. মেহেদী হাসানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে রাখা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) তদন্তসহ সব প্রক্রিয়া সেরে তার চাকরিচ্যুতির প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২১তম বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মেহেদী রিয়াদ দূতাবাসে কাউন্সেলরের দায়িত্বে থাকার সময় সেখানে আশ্রিত গৃহকর্মীদের যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন বলে প্রশাসনিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রিয়াদ দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রিত কতিপয় গৃহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় মেহেদী হাসানকে ওই পদ থেকে ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি অবমুক্ত করা হয়।
এরপর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে অসদারচণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দিয়ে ওই বছরের ১০ মার্চ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ৮ এপ্রিল লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন মেহেদী হাসান। ব্যক্তিগত শুনানিতে দাখিলকৃত জবাব ও বক্তব্য সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ওই বছরের ২০ জুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, তদন্তে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রিত কতিপয় গৃহকর্মীকে অপ্রয়োজনীয় একান্ত সাক্ষাৎকারের নামে অশ্লীল প্রশ্ন ও আচরণসহ বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা এবং যৌন নির্যাতন (ধর্ষণ) করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে অসদারণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এতে বলা হয়, তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী মেহেদীকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। ওই নোটিসে কেন তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত বা অন্য কোনো গুরুদণ্ড দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাবে মেহেদী তার বিরুদ্ধে আনীত এবং তদন্তে প্রমাণিত অভিযোগের বিপরীতে কোনো সন্তোষজনক বক্তব্য দিতে সক্ষম হননি বলে উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে। ফলে মেহেদীর দাখিলকৃত জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়েই মেহেদী হাসানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।