রাজধানীর বংশালের নাজিরা বাজারে সুলভ মূল্যে মিলে নতুন বাইসাইকলে। ফলে ক্রেতারা এখানেই ভিড় জমান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। নানা প্রতিকূলতায় ধস নেমেছে এখানকার ব্যবসায়। গত দুই বছরে বিক্রি কমেছে অর্ধেকের নিচে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (১২ আগস্ট) বংশালে কথা হয় মো. লিটন নামের এক সাইকেল ব্যবসায়ীর সঙ্গে। গত ৪ বছর ধরে একজন অংশীদার নিয়ে তিনি ব্যবসা করছেন। শুরুতে ব্যবসা ভালো হলেও, বিক্রি কমে যাওয়ায় এখন বিপাকে পড়েছেন এই ব্যবসায়ী।
আলাপের একপর্যায়ে লিটন বলেন, “আগে ৫০ টাকা বিক্রি হতো। এখন তা ২০ টাকায় নেমে এসেছে। একদিনে একটা সাইকেল বিক্রি করাই কঠিন। বিক্রি কমে যাওয়ার সঙ্গে লাভের পরিমাণও কমেছে। আগে একটা সাইকেলে ৫০০ টাকা লাভ হতো। এখন দুই-আড়াইশ হয়। এই লাভ দিয়ে দোকান চালানো খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাইকেলের দাম বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক অবস্থাও ভালো না।”
শুধু লিটন নয়। তার মতো অনেকেরই অভিযোগ, “ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাইকেলের দাম বেড়েছে। এতে ক্রেতার সংখ্যাও কমে এসেছে বাজারে। পাশাপাশি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেনায় ডুবেছে অনেকে।
রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। আর ক্রেতার অভিযোগ, মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাইকেল কিনতে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বংশালের এই বাজারে ভেলোস, কোর, রকরাইডার, হিরো, ফরএভার, আপলেইড, ফকস্টারসহ বাহারি নামের সাইকেল বিক্রি হয়। প্রকারভেদে এসব সাইকেলের বর্তমান মূল্য ৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার পর্যন্ত। দুই থেকে তিন বছর আগে এসব সাইকেলের দাম ছিল ৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত।
বিড়ম্বনার কথা উল্লেখ করে মিরপুর থেকে আসা নূর আলম খাঁন বলেন, “মেয়ে সাইকেল কেনার জন্য কান্না করছে বলে আসছি। এখানে কম দামে সাইকেল পাওয়া যায় জানতাম। কিন্তু এখানে এসে সুবিধা হলো না। মিরপুর থেকে বেকার আসলাম। দোকান ঘুরে ঘুরে ৭ হাজার টাকা দিয়ে সাইকেল কিনলাম। এই সাইকেলের দাম আগে ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা ছিল। দাম একবারে ছাড়ে না। তাদের (দোকানদার) মতে ডলারের দাম বাড়ায় সাইকেলের দাম বাড়ছে।”
বংশালের ফয়সাল হোসেন বলেন, “আমরা পরিস্থিতির শিকার। ঢাকায় আগের মতো খেলার জায়গা নেই। সরকারিভাবে যে কয়টা মাঠ আছে। তাতে ঢোকা যায় না। ছোট বাচ্চাদের খেলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই ছোট ভাইয়ের জন্য একটা সাইকেল কিনতে আসছি। গত দুই-এক বছরের তুলনায় অনেক দাম বেড়ে গেছে। এতে কিছু বলার বা করার নেই।”
ব্যবসায়ীদের দেনায় ডোবার কথা উল্লেখ করে সক্কুর সাইকেল স্টোরের সানোয়ার হোসেন বলেন, “ব্যবসার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় অনেকই সাইকেলের দোকান ছেড়ে দিচ্ছেন। এখানে আগে দোকান ঘর ভাড়া পাওয়া যেত না। এখন পাওয়া যায়। এই ব্যবসা করতে এসে অনেকেই ঋণ করে ফেলছেন। দেনায় ডুবে যাচ্ছেন। এরপরে রাস্তাটা খুড়ে (খনন) রাখা আছে। এতে ক্রেতারা আসতে পারে না। সবমিলিয়ে ভালো নেই সাইকেলের ব্যবসা। কবে যে ঠিক হবে আল্লাহই জানেন।”
সাইকেল পয়েন্টে দোকানের বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া বলেন, “আমি গত ৬ দিনে মাত্র দুইটা সাইকেল বিক্রি করছি। বিক্রি কমে যাওয়াতে লাভ কম হয়। দোকান চালাতে একদিনের খরচ হয় ১৫০০ টাকা। কিন্তু একটা সাইকেলে লাভ হয় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। ৬ দিনে দুইটা সাইকলে লাভ ৪০০ টাকা আসছে। এভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দোকান ভাড়া উঠে না। কিছু করার নাই। মানুষের হাতে সাইকেল কেনার মতো টাকা নাই। একটা সাইকেল কিনতে গেলে ১০ হাজার টাকা গুনতে হবে। মানুষ যা বেতন পায় তাতে সংসার চালানো কঠিন। সাইকেল কিনবে কীভাবে?”