কোটাপ্রথা নিয়ে টানা আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুলাই। শুরুতে এই আন্দোলন অহিংস হলেও তা সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠে ১৫ জুলাই থেকে। প্রথমে আন্দোলন প্রতিহত করতে নামেন ছাত্রলীগ ও দলীয় সমর্থকেরা। পরে নামানো হয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২১২ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুরু থেকেই আলোচনায় বসলে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হতো বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। অথচ সরাসরি আলোচনা না করে নীতিনির্ধারকদের নানা ধরনের মন্তব্যের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। বিভিন্নজনের করা মন্তব্য নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে প্রচুর। আবার কেউ কেউ আলোচনায় বসার কথাও বলেছিলেন। পুরো আন্দোলনের সময়ে নানাজনের মন্তব্য নিয়েই এই প্রতিবেদন।
আন্দোলন যখন শুরু
১ জুলাই, সোমবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম—
“৪ জুলাইয়ের মধ্যে আইনিভাবে আমাদের দাবির চূড়ান্ত সুরাহা করতে হবে।”
জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের—
“বীর মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর নন, তাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা সংবিধানসম্মত নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বড় আকারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চিরস্থায়ী করলে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করা হয়।”
৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার
হাইকোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান—
“এত আন্দোলন কিসের রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?”
শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচিতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম—
“২০১৮ সালে গণ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর নির্বাহী বিভাগ কোটা বাতিল করে যে পরিপত্র জারি করেছিল, আজকে বিচার বিভাগ দিয়ে সেই কোটাকে আবার পুনর্বহাল করা হলো। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা প্রহসন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে এই সমন্বয়হীনতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করুক এবং শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো পূরণ করুক।”
৬ জুলাই, শনিবার
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম—
“বিএনপি তো একটি রাজনৈতিক দল। দেশের ভেতরে যা হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া তো বিএনপিকে দিতেই হবে। এটা ছাত্রদের আন্দোলন। এখানে বিএনপির সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই বলে ন্যায্য আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন করব না?”
৮ জুলাই, সোমবার
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের—
“কোটা বাতিলের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।”
শাহবাগ মোড়ে অবরোধ শেষে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম—
“সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে। এটা করার দায়িত্ব কেবল নির্বাহী বিভাগ ও সরকারের। এখন আর আদালত দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।”
১০ জুলাই, বুধবার
হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়ার আগে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান—
“আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন হয় না। এটা আজকে না, আমি যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছিলাম, তখন একটি মামলায় বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। এটি সঠিক পদক্ষেপ না।”
১১ জুলাই, বৃহস্পতিবার
ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের—
“কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন। এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি।”
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান—
“শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন”
১৪ জুলাই, রোববার
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—
“কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান করতে হবে। তারা তো আইন মানবে না, আদালত মানবে না, সংবিধান কি তারা চিনবে না বা একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে, একটা সরকার কীভাবে চলে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এদের নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?”
আন্দোলন যখন প্রাণঘাতি হয়
১৫ জুলাই, সোমবার
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাস—
“শান্তিপূর্ণভাবে কোটাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে অনেকেই পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা করেছে, আন্দোলন করেছে। এটি অবশ্যই নাগরিক অধিকার। এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে নিজের আত্মপরিচয়, জন্মপরিচয়, ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে ‘‘তুমি কে, আমি কে রাজাকার! রাজাকার!’’ স্লোগান দিয়েছে, এরা সবাই এই যুগের রাজাকার।…এ যুগের রাজাকারদের পরিণতি ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে! ঘৃণা, ধিক্কার আর ক্রোধ এদের প্রতি! রাজাকারের দল তোরা, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ছাড়!”
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন—
“কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব।”
ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের—
“কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘‘রাজাকার’’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে।”
১৭ জুলাই, বুধবার
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—
“আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।”
মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের—
“আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। আমাদের সারা দেশের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারা দেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এ অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না।”
প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক—
“কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন স্বাধীনতার বিরোধীদের হাতে চলে গেছে। কাজেই আর বসে থাকার সময় নেই।”
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক—
“কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হচ্ছে, তার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজব দায়ী। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর অফিস ও ডেটা সেন্টার যদি ঢাকায় থাকত, তাহলে যেকোনো ধরনের কনটেন্ট ও গুজবকে প্রতিহত করা বা ফ্ল্যাগ দিয়ে দেওয়া অথবা ব্লক করে দেওয়া সহজ হতো।”
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক—
“শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা মৌলিক মানবাধিকার। বাংলাদেশ সরকারের উচিত মানুষের এ অধিকার নিশ্চিত করা।”
বায়তুল মোকাররম মসজিদে গায়েবানা জানাজার শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম—
“কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি জড়িত নয়। তবে এ আন্দোলনে বিএনপির নৈতিক সমর্থন রয়েছে।”
১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার
ধানমন্ডি কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের—
“রাজপথ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।”
সমাধান নিয়ে যত কথা
জাতীয় পার্টির (রওশন এরশাদপন্থী) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ—
“এ আগুন থামান। এ আগুন নেভানোর দায়িত্ব সরকারের। কালবিলম্ব না করে সম্ভব হলে আজ-কালকের মধ্যেই স্পেশাল কোর্ট বসিয়ে সমস্যার সমাধান করুন। সময় খুব কম। আমরাও সরকারে (এরশাদের আমলে) ছিলাম। আমরাও এভাবে আন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলাম। নূর হোসেন মারা যাওয়ার পর অনেকে বলেছিলেন, টোকাই মারা গেছে, কী হবে? কিন্তু আমি বলেছিলাম, না, এই নূর হোসেন একক কোনো ব্যক্তি নয়।”
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক—
“সব ধরনের সহিংসতা ও বলপ্রয়োগ, বিশেষ করে প্রাণহানির ঘটনার অবশ্যই তদন্ত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার।”
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক—
“আমরা অবশ্যই (কোটা) সংস্কারের ব্যাপারে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছি। আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার আজই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে রাজি আছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের (শিক্ষার্থী) এ প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম—
“এতগুলো লাশের ওপর দিয়ে আমরা আলোচনায় যাব কি না; গেলে কীভাবে যাব, কী নিয়ে যাব, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিইনি। এগুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি।”
মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ ও অন্যান্য
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জুনাইদ আহমেদ পলক—
“ইন্টারনেট বন্ধের জন্য পূর্বে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি বুঝে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের নানা গুজব আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সাময়িকভাবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।”
“মহাখালীতে দুর্বৃত্তদের আগুনে ডেটা সেন্টার পুড়ে গেছে। সেটা ঠিক করার কাজ চলছে। কবে নাগাদ ইন্টারনেট সেবা চালু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।”
আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের—
“সরকার শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। আদালতের কাছে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব দেবে সরকার।”
কলকাতায় এক দলীয় সমাবেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়—
“বাংলাদেশে ছাত্রছাত্রীদের রক্ত ঝরছে।”
২০ জুলাই, শনিবার
গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের—
“এটা অবশ্যই কারফিউ। এটা নিয়ম অনুযায়ীই হবে এবং সেটা শুট অ্যাট সাইট হবে।”
২২ জুলাই, সোমবার
যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শনের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান—
“জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে।”
যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শনের সময় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন—
“প্রতিটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে।”
যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শনের সময় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান—
“কিছুদিন আগে থেকেই অপতৎপরতা চালানোর জন্য ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা এখানে এসে ঘাঁটি গেড়েছে। পুলিশ সদস্যদের হত্যা করার জন্য টাকা দিয়ে মানুষ নিয়োগ করা হয়েছে।”
২৩ জুলাই, মঙ্গলবার
মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ—
“গুজব প্রতিরোধে কাজ করছে বিদেশের মিশনগুলো।”
মির্জা ফখরুল ইসলামের বিবৃতি—
“এমন নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলেও হয়নি।”
২৪ জুলাই, বুধবার
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—
“কোটা আন্দোলনকারীদের একদিন জাতির কাছে জবাব দিতে হবে, কেন তারা তাদের দেশে এই ধ্বংসযজ্ঞের সুযোগ দিল।”
আন্দোলন দমনে জাতিসংঘের লোগো–সংবলিত যান ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য—
“জাতিসংঘের লোগো ভুলে মোছা হয়নি।”
ডাক ভবনে জুনাইদ আহমেদ পলক—
“ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের নিচতলার পুরোটা পুড়িয়ে দিয়েছে। তার পার্শ্ববর্তী আরেকটি ডেটা সেন্টার আংশিক পুড়িয়ে দিয়েছে এবং তিনটি ডেটা সেন্টারের ফাইবার অপটিক্যাল কেব্লের রিডানডেন্সিসহ পুড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আইএসপির ৭০ শতাংশ সার্ভার সেখানে ডাউন হয়ে গেছে। আমরা বেলা ৩টা থেকে ধাপে ধাপে এই পরিস্থিতির কারণে রাত ৯টায় ইন্টারনেট বন্ধ করিনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।”
নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী—
“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দুর্বৃত্তরা পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক পরে হামলা চালিয়েছে।”
২৬ জুলাই, শুক্রবার
ধানমন্ডিতে ওবায়দুল কাদের—
“নিরীহ মানুষ হত্যার দায় বিএনপি ও জামায়াতের।”
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তি—
“আজ আমরা খাজা ভবন পরিদর্শন করে এবং ভবনের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, এখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলা দরকার, ডেটা সেন্টার হলো কেবল সার্ভার সংরক্ষণাগার, অর্থাৎ একপ্রকার লকার।”
‘শান্তির জন্য বৃক্ষ’ কর্মসূচিতে জুনাইদ আহমেদ পলক—
“সরকার দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।”
২৮ জুলাই, রোববার
ধানমন্ডিতে ওবায়দুল কাদের—
“শ্রীলঙ্কা স্টাইলে গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিল”
হাসপাতাল থেকে সমন্বয়কদের তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ—
“নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নিয়েছি।”
ডিবি কার্যালয়ের পাশে দাঁড়িয়ে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার—
“ডিবি বলছে, নিরাপত্তার কারণে তাদের কাছে রেখেছে। সন্তান মা-বাবার কাছে নিরাপদ। ডিবি অফিসে কিসের নিরাপত্তা?”
২৯ জুলাই, সোমবার
সমন্বয়কদের দেখতে গিয়ে ডিবি কার্যালয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ—
“প্রাণের মূল্য কোটি কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি।”
ডিবি হেফাজতে আন্দোলন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ—
“কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধে জোর করে ছয় সমন্বয়কদের দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগটি গুজব। যারা এই গুজব ছড়িয়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ—গুজব ছড়াবেন না। ডিবি একটি আস্থার জায়গা। সেখানে কাউকে আটকে রাখা হয় না। জোর করে বিবৃতি নেওয়া হয় না।”
ছয় সমন্বয়কের মুক্তি প্রসঙ্গে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্টের মন্তব্য—
“জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না, যাকে ধরেন, খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।”
সূত্র : প্রথম আলো