রাজধানীর মধ্য বাড্ডার একটি এলাকা গুদারাঘাট লেকপাড়। এই পথ ধরে হাঁটলেই চোখ আটকে যাবে একটি দোকানে। পাটের শিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে মাটির ছোট বড় বেশ কয়েকটি পাত্র। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বসার বেঞ্চ। মাটির কাপগুলো রাখা হয়েছে উপর-নিচ করে। পাশাপাশি ফ্রিজে কোমল পানীয়র ব্যবস্থাও রয়েছে।
দোকানটির সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে- ‘বিসমিল্লাহ মটকা চা ঘর’। এটা দেখে আর বোঝার বাকি থাকবে না। এই দোকানের মালিক ক্রেতার জন্য শুধু চায়ের আয়োজন করেছেন।
বাঙালি জাতি একটু আড্ডাপ্রিয় আর সৌখিন হয়। তা সবারই জানা। সেই আড্ডা যদি কেটে যায় চায়ের সঙ্গে, তবে তো আর কথাই নেই। দিন শেষে রাজধানীর বুকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে, লেকপাড়ে আনাগোনা বেড়ে যায় আড্ডাপ্রিয় মানুষদের। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্রেতা সমাগম বাড়ে এই মটকা চায়ের দোকানে।
দোকানটিতে গেলেই দেখা মিলবে, টিন-সিমেন্টে বানানো ড্রামের মতো বিশেষ এক প্রকারের চুলা। পাশেই স্টিলের কেটলিতে রাখা হয়েছে বিশেষ মসলায় বানানো দুধ-চা। ক্রেতার ফরমায়েশ এলে তামার পাত্রে জ্বলন্ত মটকা রেখে তাতে চা ঢালা হচ্ছে। আর সেই চা ফুটতে-ফুটতে বাষ্পিয় ধোঁয়ায় দোকানে ছড়িয়ে দেয় এক মোহনীয় সুবাস। এভাবেই বানানো হয় ভিন্ন স্বাদের ‘মটকা চা’।
দোকানটিতে আয়োজনের তালিকায় আরও দেখা মিলবে, চায়ের নাম ও মূল্য। যেমন- তন্দুরি রেগুলার চা ৩০ টাকা, তন্দুরি বাদাম মিক্স, মালাই ও মাখন চা ৪০ টাকা, তন্দুরি চকলেট চা ৪৫ টাকা, ইত্যাদি।
ভিন্নধর্মী এই চায়ের দোকানের মালিক সফিকুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, “স্বল্প পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা করা যায়। তাই এমন ভিন্ন আর ব্যতিক্রমী উদ্যোগে কমিয়ে আনা যায় আমাদের বেকারত্বের হার।”
নিজের কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চায়ের নাম এবং ঢাউস আকৃতির চুলা দেখে থমকে দাঁড়ান প্রভাকর চক্রবর্তী। এরপর প্রহর গুনে ছুটিরদিনে স্ত্রী মল্লিকা বাগচিকে নিয়ে আসেন এই দোকানে। এসেই ফরমায়েশ দেন চায়ের। মাটির গ্লাসে ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিতেই মেলে ‘পোড়া’ স্বাদ। মুহূর্তেই অনুভব করেন মুগ্ধতা। এই দম্পতির মতো অনেকেই আসেন এখানে।
আলাপচারিতায় প্রভাকর চক্রবর্তী বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে একদিন হেঁটে যাওয়ার সময় দোকানটি দেখেছিলাম। শুক্রবার অফিস ছুটি তাই এখানে চায়ের স্বাদ আর আড্ডা দিতে এসেছি। ঢাকায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চা খাওয়া হয়। কিন্তু এই চা একটু ভিন্নধর্মী। বিশেষ করে এই চায়ের স্বাদ। সবমিলিয়ে অসাধারণ বললে ভুল হবে না।”
মল্লিকা বাগচি বলেন, “আমি তন্দুরি রেগুলার ও বাদাম চা টেস্ট করেছি। দুটোর মধ্যে রেগুলার চায়ের স্বাদ বেশ ভালো। এটা মানতেই হবে, ঢাকার অন্যান্য চায়ের থেকে এই চা একটু ভিন্ন বটে।”
ভিন্নধর্মী এই চা দোকানের মালিক সফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “আমার ছোট একটি চায়ের দোকান ছিল। একবার ভারতের হাওয়ারা ব্রিজ এলাকায় প্রথম আমি তন্দুরি চায়ের সঙ্গে পরিচিত হই। একটি দোকানে দেখছিলাম এই চা। তাদের কাছেই চায়ের ফরমুলা শেখা। আগে আমার একটি চায়ের দোকান ছিল। ওই দোকান বাদ দিয়ে এই দোকান শুরু করি। প্রথম থেকেই একটি বিষয় লক্ষ্য করি। আর তা হলো- কাস্টমার আগের দোকানের চেয়ে এই দোকানে বেশি আসে। যারা আসেন তারা সকলেই প্রায় উচ্চ শিক্ষিত নতুবা সম্ভ্রান্ত। প্রতিদিন ২০০ কাপ চা বিক্রি করি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্ডার পাই। লাভ খুব একটা খারাপ না।”
তিনি আরও বলেন, “২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকার মধ্যে ফুটপাতেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়। কোনো কাজই ছোট নয়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করলে অনন্ত বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।”