দূষণের নগরী ঢাকার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে উদ্বোধন হচ্ছে আফতাব নগরের দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনগার প্রকল্প। ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক করতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন হবে এই শোধনাগারে। এটি থেকে সেবা পাবেন অন্তত ৫০ লাখ নগরবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর আফতাবনগরে ৬২ একর জমির ওপর নির্মিত অত্যাধুনিক পয়ঃশোধনাগারটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন নারায়ণগঞ্জের পাগলা পয়ঃশোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন তিনি।
প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকারের মাস্টার প্ল্যানে ঢাকা মহানগরীতে ৫টি পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এগুলো হলো-পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুর। এরমধ্যে দাশেরকান্দি আফতাব নগরের পয়ঃবর্জ্য শোধনাগারটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটিই উদ্বোধন হবে বৃহস্পতিবার।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এই প্রকল্পটির ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। প্রকল্পে অর্থায়ন করে চায়না এক্সিম ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকার। চীনের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
জানা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে আরও চারটি পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের মা্ধ্যমে রাজধানীর শতভাগ পয়ঃবর্জ্য শোধন করে এর স্বচ্ছ পানি নদীতে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান গণমাধ্যমকে বলেন, “চায়না প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত যতগুলো সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট করেছে তারমধ্যে এটা বেস্ট, এটার মান অনেক উন্নত।”
তিনি বলেন, “ঢাকায় আমরা ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ স্যুয়ার ট্রিট করতে পারি। এটা পাগলা পয়ঃশোধনাগারের মাধ্যমে করা হতো। এটাও অনেকটা নড়বড়ে। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার হওয়ার পর আমরা অলমোস্ট ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ট্রিট করতে পারছি। পাগলার কাজ শেষ হয়ে গেলে ৩৫ শতাংশ সুয়্যারেজ কিলিং করতে পারব। কোনো পয়ঃবর্জ্য যাতে ঢাকার চারপাশের জলাভূমি বা নদীতে না যায় এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
তিনি আরও বলেন, “দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে রমনা থানার অন্তর্গত মগবাজার, ওয়্যারলেস রোড, নয়াটোলা, ইস্কাটন, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, মহানগর হাউজিং এলাকা, কলাবাগান, ধানমন্ডি, (পূরাবংশ) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও এলাকা, নাখালপাড়া, গুলশান, বনানী, বাড্ডা, আফতাবনগর, নিকেতন, সাতারকুল এবং হাতিরঝিল এলাকায় সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিস্কাশিত হওয়ার মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ করা যাবে।”
অন্যদিকে, পাগলার পয়ঃশোধনাগার এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে কলাবাগান, মগবাজার, শাহবাগ, ইস্কাটন, আরামবাগসহ আরও ১৩টি এলাকায়। এছাড়া, হাতিরঝিলের পানি যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য কয়েকটি ডাইভারশন লাইনও নির্মাণ করা হয়েছে।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক মহসিন আলী সাংবাদিকদের বলেন, “দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্পের একটি অংশ। হাতিরঝিলকে বাঁচানোর জন্যই রামপুরা খালে পয়ঃবর্জ্য ফেলা হতো। যে কারণে পরিবেশ দূষণ হতো। পরবর্তীতে একটা লাইন করে দেওয়া হয়েছে যা দিয়ে পয়ঃবর্জ্য পয়ঃশোধনাগারের লাইনে চলে আসে।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টন ছাই পাওয়া যায়। এ ছাই যখন প্রসেসিং করি তখন ১০ শতাংশ পাওয়া যায়। যা ৪৫-৫০ টন হয়। এ ছাইগুলো সিমেন্ট কোম্পানিকে দেওয়া হয়। প্রতি তিন মাস পর পর ভারতীয় একটি কোম্পানি দিয়ে বিষয়টি চেক করা হয়। প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব।”
জানা যায়, ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। শুরুতে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এর মেয়াদ বাড়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিপিপিতে এই প্রকল্পের ব্যয় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।