চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ জুলাই। ইতোমধ্যে তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছে একাধিক ব্যক্তি। এরমধ্যে রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গন ও সংস্কৃতি অঙ্গনের দু-একজন ব্যক্তির নামও শোনা যাচ্ছে। তবে সকল নাম ছাপিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিনের নাম রয়েছে সবার শীর্ষে।
এখন পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে ওয়াকিল উদ্দিনই একমাত্র স্থানীয় প্রার্থী। এই ঢাকা ১৭ আসনের অলিতে-গলিতেই তার বেড়ে ওঠা। এই এলাকার আপামর জনসাধারণের সঙ্গেই তার সুখ-দুঃখের মিতালি। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে এই এলাকার মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছেন তিনি। যে কারণে গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাসানটেকের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা ওয়াকিল উদ্দিনকেই ঢাকা-১৭ আসনের নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে দেখতে চান।
দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, নেতা হিসেবে ওয়াকিল উদ্দিন সেরা। কর্মীদের যে কোনো সমস্যায় তাকেই সবার আগে পাওয়া যায়। দলের যে কোনো কর্মসূচিতে তিনিই সবাইকে সংগঠিত করেন। এলাকার কোনো সমস্যায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঢাকা-১৭ আসনের মানুষকে আগলে রেখেছেন। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাদ্য ও বস্ত্র সহায়তা দিয়ে। তাই এমন নেতাকেই অভিভাবক হিসেবে দেখতে চান তারা।
করোনাকালীন সময়ের কথা উল্লেখ করে বনানী কড়াইল বস্তির ষাটোর্ধ জমেলা খাতুন বলেন, “ওয়াকিল ছারে আমাগের বস্তিতে অনেক সাহায্য করছে। বিপদের সময় হ্যায় আমাগের পাশে ছিলো, আর কাউরে খুঁইজা পাই নাই। যহন আমরা খাইতে পারি নাই, হ্যায় আমাগের মুখে খাউন তুইলা দিছে। আমরা হ্যারেই আমাগের এমপি চাই।”
শুধু জমেলা খাতুন নয়, এই ইচ্ছা এলাকার সিংহভাগ মানুষের।
ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াকিল উদ্দিন বলেন, “রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলের প্রতি শতভাগ আনুগত্য থেকে ত্যাগ স্বীকার করে এখন পর্যন্ত দলের হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আর এ কারণে এবার দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। আশা করি, এবার দল এবং প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না। তারপরও দলের হাইকমান্ড যার প্রতি আস্থা রাখবে, তার হয়েই আমি কাজ করে যাব।”
ওয়াকিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি আবাসন প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রপার্টিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান পরিচালক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় তিনি। ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করার পর তেজগাঁও কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা জেলার ডেমরা-তেজগাঁও আসনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রার্থী হলে তার নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেন এবং বঙ্গবন্ধুকে ভোট প্রদান করেন । ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় গুলশান থেকে বিশাল লাঠি মিছিলসহ জনসভায় যোগদান করেন ওয়াকিল উদ্দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান-এর নির্দেশে এবং পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং সম্পন্ন করে স্ব-শরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে খণ্ডকালীন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৭৩-৭৪ সালে তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে সকল দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন ।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগ বৃহত্তর গুলশান থানার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হলে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জান্তা সরকার ধরপাকড় শুরু করে। সে সময় তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালায়, না পেয়ে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে প্রায় তিন বছর মানবেতর জীবনযাপন করেন তিনি। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পুনরায় এলাকায় এসে নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন । ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী নিয়ে বিমানবন্দর সড়কে বনানী-কাকলী স্পটে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তার দু-পাশে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান ।
১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকারের অধীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করার পর খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া আসন ঢাকা-৫ (তৎকালীন গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট)-এর উপনির্বচানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৮নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন । ৯৩-৯৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রোষানলে পড়ে প্রায় ২৫টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হন। ৯৩-০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন । ৯৩-৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় থাকেন। ২০০৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।