বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ ডেনিম রপ্তানিতে ইউরোপ-আমেরিকায় প্রথম। শীর্ষ অবস্থানে আসার পেছনে কাজ করেছে ক্রেতাদের আস্থা ও শিল্পকে টেকসই করার নানা পদক্ষেপ। বিগত সময়ের করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রবল ধাক্কা কাটিয়ে ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বৈশ্বিক ডেনিম সরবরাহ চেইন।
পণ্যের গুণমান ও টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সোর্সিং করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক খুচরা ডেনিম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলো। কম সময়ের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে আগ্রহ বেড়ে যাওয়া দেশের ডেনিম প্রস্তুতকারকদের জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
‘ডেনিম শিল্পকে নতুন করে ভেবে দেখা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় চলা দুই দিনব্যাপী ‘ডেনিম এক্সপো’তে এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন রপ্তানিকারক, তাদের কেমিক্যাল, অ্যাকসেসরিজ ও কাপড় সরবরাহকারীরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেছেন, “ডেনিম পোশাকখাতে আসছে আরও বিনিয়োগ। গেল এক দশকে ডেনিম প্রসেসিংয়ে আমরা যথেষ্ট এগিয়েছি। আমাদের এখানে উচ্চমূল্যের ডেনিম তৈরি ও রপ্তানি হয়। রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ফেব্রিক জোগান দিতে সক্ষম।”
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, “সবুজ ডেনিম কারখানাগুলো বাংলাদেশে অবস্থিত। টেকসইয়ের দিক থেকে বিশ্বে অবস্থান অত্যন্ত সক্রিয় আর সম্ভাবনাময় শিল্প। যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলা করতে পারলে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি অর্জন করা সম্ভব হবে। বিশ্বে ডেনিমের বাজারে আরও বড় শেয়ারের জন্য তৈরি হচ্ছেন দেশীয় রপ্তানিকারকরা।”
রপ্তানিকারকরা বলছেন, ব্যবসার সুযোগ কাজে লাগাতে কিছু প্রস্তুতকারক তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। এছাড়া তাদের অনেক সরবরাহকারী বাংলাদেশে নতুন অফিস খুলে কার্যক্রম সম্প্রসারিত করছে।
তথ্যমতে, বর্তমানে বৈশ্বিক ডেনিমের বাজারের আকার প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলার। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশীয় কারখানাগুলো নিজস্ব ডিজাইন ও অটোমেশনের দিকে ছুটছে। যে কারণে দেশের বাজারের হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ আছে।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, “শীর্ষস্থানীয় ডেনিম রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ রপ্তানির পরিমাণ বর্তমানের ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে পারবে। দেশে ৪০টি ডেনিম কাপড়ের মিলসহ ডেনিম শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজে ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ আছে।”
বৈশ্বিক ডেনিম সরবরাহে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে অবস্থান করছে বলে দাবি করছেন রপ্তানিকারক ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলছেন, দেশীয় অনেক গ্রাহক ইতোমধ্যে সোর্সিংয়ের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। কারণ, কিছু স্থানীয় নির্মাতা বাজার সম্পর্কে সঠিকভাবে না জেনে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করছে।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ডেনিম রপ্তানিকারক অনন্ত অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, “কিছু খুচরা বিক্রেতা ইতোমধ্যেই একটি দেশের ওপর নির্ভরতা কমানোর কৌশল বাস্তবায়ন করেছে। ঝুঁকি কমাতে তারা সোর্সিং স্থানান্তর করেছে। চীনা ফাস্ট ফ্যাশন খুচরা বিক্রেতা শিন অন্যান্য খুচরা বিক্রেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ শিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪-৫ ডলারে ডেনিম বিক্রি করতে পারে।”
শরীফ জহির আরও বলেন, “শিনের মতো খুচরা বিক্রেতাদের সরবরাহ চেইন ঠিকমতো শনাক্ত করা যায় না। শিন কোন কারখানা থেকে পণ্য তৈরি করে, তা কেউ জানে না। স্বভাবতই মানুষ সস্তা পণ্য কেনে। এর ফলে ফাস্ট ফ্যাশন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে।”
রাজধানীতে দুই দিনের ডেনিম এক্সপোতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ভিয়েতনাম, জাপানসহ ১১টি দেশের ৬০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান টেকসই কাপড় থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক ডিজাইনসহ ডেনিম শিল্পের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরতে তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবনগুলো প্রদর্শন করছে।