রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এখনো যেন সচেতন নয় অনেকেই। মশা থেকেই যখন ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। তখন রোগীর শয্যাতেও দেখা মিলছে না মশারির। তবে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের দাবি, সবক্ষেত্রে রোগীকে মশারিতে আবদ্ধ করে রাখা বাঞ্ছনীয়।
রোববার (২০ আগস্ট) রাজধানীর মুগদা মেডিকেল হাসপাতালের ডেঙ্গুর শিশু ওয়ার্ডে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
মুগদা হাসপাতালে আছে বিশেষায়িত ওয়ার্ড। সেবার মান ভালো হওয়ায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীকেও পাওয়া যায় ওয়ার্ডটিতে। অনেক রোগীকে দেখা গেছে মেঝের শয্যাতে। রোগীর তুলনায় শয্যা সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিশেষায়িত এই ওয়ার্ডের ব্যবস্থা।
এদিকে প্রায় সকল রোগীর শিরায় দেওয়া ছিল স্যালাইন। তবে একটি শয্যাতেও দেখা যায়নি ‘মশারি’।
বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা হলে অনেকেই বলেন, “মশার উপদ্রব কম থাকায় মশারির প্রয়োজন নেই।”
আবার কেউ অভিযোগ করছেন, মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালের এমন চিত্র।
আর হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “বিশেষায়িত ওয়ার্ড হওয়ার কারণে মশারি টাঙানোর সুযোগ নেই।”
প্রতিষ্ঠানটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৬৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালটিতে। শনিবার (১৯ আগস্ট) ভর্তি হয় ৬৩ জন রোগী। একইভাবে চিকিৎসা শেষে রোববার ছাড়পত্র নেন ৮৫ জন এবং শনিবার নেন ৪৪ জন রোগী। আর গত দুই দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ২ জনের।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে রোববার পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে প্রায় ৪৮ হাজার ৪৫৬ জন এবং মহানগরের বাইরে ৫১ হাজার ৫৩৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ের ব্যবধানে ঢাকা মহানগরে মৃত্যু হয়েছে ৩৫৭ জনের এবং মহানগরের বাইরে হয়েছে ১১৯ জনের।
বরিশাল থেকে মুগদা হাসপাতালে এসেছেন ফারুক হোসেন। তার মেয়ে গত কয়েকদিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত। বরিশাল থেকে এক আত্মীয়র পরামর্শে এই হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, “এখানে চিকিৎসা অনেক ভালো। মেয়েটা আমার অনেকটা সুস্থ হয়েছে। বাসা থেকে একটা মশারি আনছি। একদিন টাঙাইছিলাম। পরে দেখি এখানে কেউ মশারি টাঙায় না। কেমন জানি মনে হচ্ছিল। তাই পরে আর টাঙাইনি। যদিও মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা নেই। তবে এখানে মশার উপদ্রবও নেই বললেই চলে।”
ফাহিম ইসলাম নামে এক আক্রান্ত শিশুর মা ডলি বেগম বলেন, “সব ঠিকমতো পাইছি। যা আমার ছেলেটার প্রয়োজন সবই দিছে। এখানে মশা দেখি না তেমন। এখানে মশারি কাউকে দেয়নি। তাই মশারি টাঙাইনি।”
শান্তা নামে এক শিশুর মা মশারির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বলেন, “আমার বাচ্চাটার জ্বর, বমি আর পেট ব্যথা। আজকে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করাইলাম। পরীক্ষা করার রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। তবে ডাক্তার বলছে এগুলো ডেঙ্গুর লক্ষণ। আজকে হাসপাতালে এনেছি। এখন পর্যন্ত মশা তেমন দেখি নাই। তবে সবাইকে মশারি টাঙানো উচিত।”
এই বিষয়ে হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, “হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি। ফলে মেঝেতে বিশেষায়িত ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে মশারি টাঙানোর জায়গা নেই। হাসপাতালে দুই বেলা ফিউমেডিশন করা হয়। সিংঙ্গাপুর থেকে একটি টিম হাসপাতাল পরীক্ষা করেছে। হাসপাতালে ডেঙ্গুর লার্ভা নেই। এরপরেও যদি আমরা মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা করি। তাহলে দেখা যাবে মানুষ, ডাক্তার এবং নার্স রোগীদের কাছে যেতেই পারছেন না।”
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই মশাই ডেঙ্গুর বাহক। মশা নিয়ন্ত্রণের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমমতো, রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ। এক্ষেত্রে মশা ও তার লার্ভা ধ্বংস করতে ওষুধ দেওয়া। দ্বিতীয়ত, পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রজননস্থল ধ্বংস করা। তৃতীয়টি, মশার বংশগতি পরিবর্তন করা।”
লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, “মশার সঙ্গে মানুষের দূরত্ব তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মশারি, মশা প্রতিরোধক তরল কিংবা দিনে শরীরে ঢেকে করা যায়। বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অনেক জায়গায় মশার উপদ্রব কম হওয়ার কারণে ওই এলাকার মানুষ মশারি ব্যবহার করেন না। কিন্তু ওই এলাকায় যদি কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তাহলে অবশ্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশারি ব্যবহার করতে হবে এবং অন্যদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী মশারি ব্যবহার করতে হবে।”