অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জাতীয় পে-কমিশন গঠন এবং বেতন বৈষম্য দূর করতে বেতন গ্রেড ২০টির পরিবর্তে ১০টি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ।
শনিবার (২ নভেম্বর) পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সরকার কর্তৃক গঠিতব্য পে-কমিশনে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেছেন।
পে-কমিশনে সংযুক্ত পরিষদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হলে পরে জানানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
পরিষদের সভাপতি মো. বদিউল কবীর বলেন, “আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে ৯ দফা দাবি পেশ করেছি। দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বুধবার (৬ নভেম্বর) জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।”
পরিষদের ৯ দাবি
১। পতিত সরকারের আমলে চাকরি হতে অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত এবং বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানকারী কর্মচারীদের স্বল্প সময়ের মধ্যে পুনর্বহালের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগে পত্র জারি করা। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য হতে যারা ইতোমধ্যে নিয়মিত সরকারি চাকরিকাল অতিক্রম করেছেন তাদের ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা প্রদানসহ নিয়মিত চাকরির ন্যায় ভূতাপেক্ষভাবে আর্থিক সুবিধাদি প্রদানের নির্দেশনা।
২। অনতিবিলম্বে কর্মচারী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় পে-কমিশন গঠন এবং বেতনবৈষম্য দূরীকরণ, ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে বিদ্যমান ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১০টি বেতন গ্রেড নির্ধারণ করা। পূর্ণাঙ্গ পে-কমিশন বাস্তবায়নের পূর্বে সকল স্তরের কর্মচারীদের জন্য (১-২০ গ্রেড পর্যন্ত) শতকরা ৫০ মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পরবর্তী পে-কমিশন চূড়ান্ত বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ২০টি গ্রেডের মধ্যে ২০তম গ্রেডে (অফিস সহায়ক) কর্মরতদের বেতন গ্রেড ১৭তম গ্রেডে ও ১৭তম গ্রেড (ক্যাশ সরকার) ১৫তম গ্রেডে, সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গ্রেড-১০ হতে গ্রেড-৯, হিসাব রক্ষক গ্রেড-১২ হতে উপ-সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গ্রেড-১০, ক্যাশিয়ার গ্রেড-১৪ হতে গ্রেড-১২ ও ফটোকপি মেশিন অপারেটর/ডিএমও গ্রেড-১৮ হইতে গ্রেড-১৬-তে উন্নীত করা।
৩। পূর্বের ন্যায় ১০০% পেনশন ও গ্র্যাচুইটি হার ৪০০ টাকা বৃদ্ধি করতে হবে।
৪। সকল স্তরের কর্মচারীদের জন্য পূর্বের ন্যায় টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চালু করা।
৫। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক আয়সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত রাখা।
৬। সচিবালয় কর্মচারীদের জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ন্যায় সচিবালয় ভাতা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ন্যায় রেশনিং প্রথা চালু করা।
৭। যেহেতু দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সরকারি কর্মচারীরা পূর্বের চেয়ে দীর্ঘদিন কর্মসম্পাদনে সক্ষম, সেহেতু চাকরি থেকে অবসরের বিদ্যমান ৫৯ বছরের বয়স বা সময় সীমা আরও ৩ বছর বর্ধিত করে ৬২ বছর নির্ধারণ করা।
৮। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন পদনাম হয়েছে সে প্রেক্ষিতে সচিবালয় কর্মচারীদের কর্মস্থলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পদনাম হওয়া আবশ্যক বিধায় নতুন পদনাম করণের প্রস্তাব করা হলো। সচিবালয় কর্মচারীদের বিদ্যমান পদনাম পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত পদনাম অনুযায়ী আদেশ জারি করা। বাংলাদেশ সচিবালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির বিদ্যমান পদসমূহ পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত পদে পদনাম পরিবর্তন।
৯। পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরমভাবে বঞ্চিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্যতা অনুযায়ী সংযুক্ত সার-সংক্ষেপে বর্ণিত পদ সমূহ সংখ্যানুপাতে সংরক্ষণের আদেশ জারির নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান এবং কর্মচারীদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত পর্যালোচনা কমিটিতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একজন প্রতিনিধি অথবা তাদের পক্ষ থেকে মনোনীত একজন প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। সকল স্তরের কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে বর্ণিত পদোন্নতির মেয়াদ পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা।