আনিসুল হক। চাকরি করছেন রাজধানীর একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের কয়েকটি ফ্যানের দোকানে ঘুরছেন। ছোট-বড় চার্জার ফ্যান দেখে দরদাম করছেন। তবে দামের হিসাব না মেলায় ঢুঁ মারছেন অন্য দোকানে।
পরিচয় দিয়ে কথা হয় আনিসুল হকের সঙ্গে। বললেন, “কাজ করি প্রাইভেট কোম্পানিতে। বেতন যা পাই তাতে কোনোমতে সংসার চলে। এখন তো মাসের শেষ। হাতে টাকা তেমন নেই। কিন্তু গরমে রাতে ঘুমাতে পারি না। লোডশেডিং হলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাই গরমে বাচ্চাদের কথা ভেবে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। তবে দাম যে এত বেশি বেড়েছে জানা ছিলো না। যে টাকা হাতে ছিল তা দিয়ে পছন্দের ফ্যান কিনতে পারছি না।”
আনিসুল হক আও জানালেন, হাতে টাকা কম থাকায় ফ্যান যে কিনতে পারছি না তা ফোনে জানালাম স্ত্রীকে। কিছুদিন আগে এসে দেখেছিলাম ছোট চার্জার ফ্যানগুলো তিনশ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর এখন এসে দেখি সেগুলো সাড়ে চারশ টাকা হয়ে গেছে।”
সপ্তাহ দুয়েক ধরেই টানা তাপপ্রবাহ চলছে দেশজুড়ে। রাজধানীসহ দেশবাসী তীব্র গরমে অতিষ্ঠ। হিট অ্যালার্ট জারি রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে ইলেকট্রনিক্সের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। চার্জার ফ্যান, সিলিং ফ্যান, এয়ারকুলার ফ্যানের বেচাবিক্রি বেড়ে গেছে। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। দামের সঙ্গে সাধ্যের মিল করতে না পারায় অনেকেই খালি হাতে ফিরছেন।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে ফ্যান কিনতে এসেও খালি হাতে ফিরছিলেন নাজমুল সরকার নামের একজন। তিনি বললেন, “বাজেটের মধ্যে ফ্যান না পাওয়ায় ঘুরে যেতে হচ্ছে। বাজেট বাড়িয়ে ফ্যান কিনতে আসবো পরে। গরমের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে ফ্যানের দাম বাড়ছে, তাতে বাজেট ডাবল করা ছাড়া উপায় নেই।
মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, পাইকারিতে ফ্যানের দাম বেড়েছে একশ থেকে দুইশত টাকা পর্যন্ত। পাইকারি মার্কেট থেকে ফ্যান কিনে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন কয়েকগুণ লাভ রেখে। ফলে অনেক ক্রেতার সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কয়েকজন ক্রেতা জানালেন, প্রচণ্ড গরমে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঠিক দুপুর বেলা মার্কেটের বাইরে তখন প্রচণ্ড গরম। বাইরের অনেকেই চলে এসেছে মার্কেটের ভেতরে। পুরো মার্কেটেই ঠাণ্ডাভাব। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে প্রতিটা দোকানের সামনে ছোট ছোট ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শুধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট নয়, স্টেডিয়াম মার্কেট, পল্টন, বিজয়নগর, খিলক্ষেত, উত্তরা, মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সব মার্কেটের অবস্থা একই রকম। তীব্র দাবদাহে তাপমাত্রা যত বাড়ছে ততই চাহিদা বাড়ছে ফ্যানের। বিশেষ করে সব থেকে বেশি চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, অসহনীয় তাপপ্রবাহের উত্তাপ থেকে বাঁচতে সামর্থ্য অনুযায়ী দোকানে ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন চার্জার ফ্যান ও সিলিং ফ্যান। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে চার্জার ফ্যান।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, ছোট চার্জার ফ্যান চারশ টাকা থেকে শুরু করে সাতশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি চার্জার ফ্যান নয়শ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকার ভেদে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার নন ব্র্যান্ডের বড় চার্জার ফ্যান সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও নন-ব্যান্ড সিলিং ফ্যান এক হাজার পাঁচশ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার দুইশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান দুই হাজার আটশ টাকা থেকে শুরু করে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির স্ট্যান্ড ফ্যান আকার অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। এয়ারকুল ফ্যান বারো হাজার টাকা থেকে শুরু করে পঞ্চাশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এয়ারকুল ফ্যান দেড় লাখ টাকারও আছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সানোয়ার নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গরমে সাথে ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। দাম বাড়লেও বিক্রি বেড়েছে। তবে মানুষ সিলিং ফ্যান কিংবা এয়ারকুলার ফ্যানের থেকে মাঝারি ধরনের চার্জার ফ্যান বেশি কিনছেন। সামনের দিকে চার্জার ফ্যানের সংকট দেখা দিবে এমন গুজবে অনেক ব্যবসায়ী ফ্যান মজুদ করে রেখেছেন।”
সোলেমান সরকার নামের আরেক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই গরমে মানুষ প্রচুর পরিমাণে ফ্যান কিনছেন। ফ্যানের দোকানগুলোতে তাকিয়ে দেখেন মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা এসি কিনছে। যাদের এসি কেনার সামর্থ্য নেই তারা চার্জার ফ্যান কিংবা এয়ারকুলার ফ্যান কিনছেন।”
সোলেমান আরও বলেন, “গরমের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথেই ফ্যানের দাম বাড়তে শুরু করে। আমরা আগে যে মাঝারি চার্জার ফ্যান দুই হাজার টাকায় কিনতে পারতাম, তা এখন দুই হাজার পাঁচশ টাকা অথবা দুই হাজার সাতশ টাকায় কিনতে হচ্ছে।