• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩০, ১৯ রজব ১৪৪৬
১৫৫ নাগরিকের বিবৃতি

পাঠ্যপুস্তক ও সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতির দাবি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
পাঠ্যপুস্তক ও সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতির দাবি
বিবৃতি। ফাইল ফটো

পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নামা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশের সমাজ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ১৫৫ নাগরিক।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, “আমরা, দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন নিম্নস্বাক্ষরকারী নাগরিকরা, একটি উগ্র জাতিবাদী ভুঁইফোঁড় সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দসম্বলিত গ্রাফিতি সরিয়ে ফেলা, বিক্ষোভরত আদিবাসী ছেলে-মেয়ের ওপরে সংগঠনটির ‘সন্ত্রাসীদের’ ন্যক্কারজনক আক্রমণ এবং এর প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা’র শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপরে পুলিশ বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

১৫৫ নাগরিক বলেন, “বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভর করে জেঁকে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ ছিল পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের। ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন ঘটেছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার এখনো অবসান ঘটেনি। অভ্যুত্থানের পরে উগ্র জাতিবাদী ফ্যাসিবাদী শক্তিকে নব উদ্যমে পাহাড়ে আগ্রাসন চালাতে দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মদদে আমাদের দেশের আদিবাসীদের ওপরে তীব্র আক্রমণ-নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকায় আমরা ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামে একটি ভুঁইফোঁড় উগ্র জাতিবাদী সংগঠনের আবির্ভাব দেখতে পারছি, যারা নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ এবং রচনা পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দসম্বলিত গ্রাফিতি সরিয়ে ফেলার দাবি জানায়, এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এনসিটিবি সেই গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।”

বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী সমাজ গঠন, তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই চালানো হচ্ছে এই আক্রমণ। এই আক্রমণ কেবল উগ্র জাতিবাদী-ফ্যাসিবাদী সংগঠনটির এবং পতিত ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তির নয়, বরং প্রবলভাবে রাষ্ট্রশক্তিও এই আক্রমণে শরিক। তারই প্রমাণ মেলে গত ১৫ জানুয়ারিতে আদিবাসীদের ওপরে হামলার সময় পুলিশ বাহিনীর নির্লিপ্ত দর্শকের ভূমিকায় এবং ১৬ জানুয়ারিতে এর প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা’র শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপরে পুলিশ বাহিনীর বেধড়ক লাঠিচার্জ, জলকামান, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে। আমরা মনে করি, জাতিবাদী-ফ্যাসিবাদী রাজনীতির কবর রচনা করেই কেবলমাত্র জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক একটি বহুত্ববাদী সমাজ গঠন করা সম্ভব।”  

বিবৃতিতে বেশকিছু দাবি জানান ১৫৫ নাগরিক। দাবিগুলো হলো,

১। পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে আদিবাসীদের সমাবেশের ওপরে ন্যক্কারজনক হামলার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিলের ওপরে হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তা ও নির্দেশ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২। পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে এবং এনসিটিবির নতজানু চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসীদের অপরায়ন ও বিমানবিকীকরণের যাবতীয় প্রকাশভঙ্গি দূর করতে হবে এবং আদিবাসীদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। আদিবাসীদের যথাযথ সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। সংবিধানে নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি পরিচয় থাকলেই চলবে না, জাতি হিসেবে বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ এর বদলে ‘আদিবাসী’ পরিচয় প্রদান করতে হবে এবং সব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও শিল্পকলাসমূহের পরিপোষণ ও উন্নয়নের পাশাপাশি আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের অঙ্গীকার সম্বলিত বিধান রাখতে হবে। 
৪। জাতিসংঘের ‘ডিক্লারেশন অন দ্য রাইটস অফ ইন্ডিজেনাস পিপলস’ (২০০৭) সনদে পরিপূর্ণভাবে অনুস্বাক্ষর করতে হবে। আদিবাসীদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫। পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী ও অলিখিত সেনাশাসন অপসারণ করতে হবে।

Link copied!