• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে গিয়ে যা হারাল সুন্দরবন


বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৪, ০৭:৫৩ পিএম
ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে গিয়ে যা হারাল সুন্দরবন

এবারও বুক পেতে দিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়কে ঠেকিয়ে দিয়ে উপকূলের জনপদকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি সুন্দরবন। সিডর, আইলার পর রেমালের সামনেও ঢাল হিসেবে দাঁড়ানোর কারণে এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ বনটিকে। হারাতে হয়েছে প্রাণ ও জীববৈচিত্রকে।

এবারই প্রথম কোনো ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে ডুবেছিল সুন্দরবন। এতে হরিণসহ বহু বন্য প্রাণী ভেসে গেছে। বনের বিভিন্ন স্থানে উপড়ে গেছে গাছপালা। পানি সরে যাওয়ায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত স্পষ্ট হতে শুরু করেছে বনটিতে।  

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলোচ্ছ্বাসে টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে পানিতে নিমজ্জিত থাকায় সুন্দরবনের বন্য প্রাণী ও বনজীবীদের জন্য করা মিঠাপানির পুকুরে ঢুকে পড়েছে লোনাপানি। এতে মিঠাপানির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে বহু হরিণ।

রেমালে প্রাণ হারিয়েছে ৩৯ হরিণ। ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর পর্যন্ত বনের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৬টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। তবে স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, সব মিলে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৯টি মৃত হরিণ। এর মধ্যে রয়েছে বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর নদে ভেসে আসা তিনটি হরিণের মরদেহ। তাছাড়া আহত ১৭টি হরিণ উদ্ধার করার পর সেবা দিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়াও হয়েছে।

সূত্রমতে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনে অবকাঠামোয় প্রায় ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষতি নিরূপণ করেছে বন বিভাগ। পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবনের মিষ্টি পানির আধার হিসেবে শতাধিক পুকুর লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা ধরে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমাল তাণ্ডব চালায়। এসময় ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়ায় বনের বহু গাছপালা ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের কাঠের জেটি, বনরক্ষীদের ঘর, স্টেশন ফাঁড়ি।

প্লাবিত হয়েছে বন অফিস। ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অস্বাভাবিকভাবে ২৫ থেকে ৩০ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে জলোচ্ছ্বাস। ফলে সাগর-নদী উত্তাল থাকায় কর্মকর্তারা সব জায়গায় যেতে পারছেন না। অনেক বন্য প্রাণী মারা যাওয়াসহ আরও বহু ক্ষয়ক্ষতির খবর শুনতে পেলেও তারা নিরূপণ করতে পারছেন না।

সুন্দরবনের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানিয়েছেন, ঝড়ের পর প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের কারণে গাছপালার চেয়ে বন্যপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

Link copied!