• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফাটল ধরছে ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যে, বাড়ছে দূরত্ব


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৯:৩২ এএম
ফাটল ধরছে ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যে, বাড়ছে দূরত্ব

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দলমত নির্বিশেষে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকলেও  ছাত্রসংগঠনগুলো যুগপৎ আন্দোলনে নামে। তবে পাঁচ মাস না পেরোতেই এই ঐক্যে দেখা দিয়েছে ফাটল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর দূরত্ব বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে বিভেদ, উঠেছে বৈষম্যের অভিযোগ। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেতরে-বাইরে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, বিভাজন টিকিয়ে রেখে কিছু সংগঠন অপরাজনীতি করছে। 

 এই ফাটলের কারণে একে-অপরকে দুষছেন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা।

গত ৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছাত্রদের সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করে ভেতরে-বাইরে অনৈক্যের বিষয়টি আবারও সামনে আসে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। শুধু তা=ই নয়, আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রনেতাকে বাইরে রাখার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আন্দোলনে সম্মুখসারিতে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদেরও গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, একটি পক্ষ নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে অন্যদের সামনে আসার সুযোগ দিচ্ছে না।

আর এর একদিন পর ৫ ডিসেম্বর ছাত্রদলের নেতৃত্বে ২৮টি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মতবিনিময় সভায় ডাকা হয়নি ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে।

এ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, “৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন সংস্কার ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক যখন এককেন্দ্রিক করবেন তখন বাকি ছাত্রসংগঠনগুলোর কথা বলার জায়গা থাকে না।”

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, “আমরা দেখেছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল—সবাইকে নিয়ে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের যে কার্যক্রম, তাতে তাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয় না বলেই মনে করছি আমরা।”

ছাত্রশিবিরও ঐক্যে ফাটল দেখছে। তবে ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় ডাক না পাওয়াকে বড় করে দেখছে না সংগঠনটি।

ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আন্দোলন বা আন্দোলনের পরে আমরা এমন কোনো কথা বলিনি যাতে ঐক্যে নষ্ট হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক জায়গা থেকে ঐক্যে ফাটল ধরাতে অনেক কিছু করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে ঐক্যে ফাটল না ধরে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে সামনে থেকে আন্দোলন করেছি, গুলি লেগেছে আমাদের গায়ে। অথচ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পায় সিলেকটিভ কিছু মানুষ। একটি পক্ষকে শুধু নিজেরা সামনে থাকার নেশা পেয়ে বসেছে। আমাদের কোথাও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আন্দোলন-পরবর্তী আমরা আর কথা বলার মতো পরিস্থিতিও পাচ্ছি না। ইচ্ছেকৃতভাবে আমাদের আড়ালে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঐক্য নষ্ট হচ্ছে এবং কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন হচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘শুধু নিজেদের দলের লোককে ফ্রন্টলাইনে রেখে সুযোগ-সুবিধা দেবেন আর বাকি স্টেকহোল্ডারের প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কা করবেন না, এ বেইনসাফের সমালোচনা আমরা করবই। ক্রাইসিস মোমেন্টে একদিকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন ঘরানার ছাত্রদের একত্রিত করবেন আর অন্যদিকে ক্ষমতার বলয়ে শুধু নিজেদের লোকজনকে বসিয়ে ইনসাফের মিথ্যা আশ্বাস দেবেন, সেটা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। ৫ আগস্টের পর থেকে আপনারা অনেক সত্য লুকিয়েছেন, শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেদের বলয়কে শক্তিশালী করার জন্য। মনে রাখবেন, বেইনসাফ আর বিভাজনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ঐক্য কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না।’

এসব অভিযোগ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, ছাত্র-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট রূপরেখা পছন্দ না হওয়ায় ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। 

সংগঠনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “একটা বিভাজন স্পষ্টত তৈরি হয়েছে, ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চালু করার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বাধার মাধ্যমে কেউ কেউ অপরাজনীতি টিকিয়ে রাখতে চাইছে। একইভাবে অনেকেই চাচ্ছে না যে, নতুন ধারার রাজনীতি আসুক।”

আপাত দূরত্ব তৈরি হলেও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আবারও ঐক্য গড়ে তোলার আশার কথাও জানিয়েছেন ছাত্র নেতারা।

Link copied!