সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “সংস্কারের সুপারিশ প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন সরাসরি আলোচনা করবে না। সংবিধান সংস্কারে জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত নেবে কমিশন। এ জন্য একটি ওয়েবসাইট খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) থেকে এই ওয়েবসাইট কার্যকর হবে। একইসঙ্গে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ তুলে ধরা হবে।”
রোববার (৩ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদের এলডি মিলনায়তনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, মো. মুসতাইন বিল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “কমিশন এই পর্যায়ে সংবিধান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সিভিল সোসাইটির সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, তরুণ চিন্তাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব আহ্বান করবে।”
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। আমরা আশা করছি যে, আগামী সপ্তাহ থেকেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সক্ষম হব। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ তুলে ধরবে কমিশন। তবে, কোন পদ্ধতি কাজ করা হবে সে বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করব লিখিত মতামত এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। সরকার বিভিন্ন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। ফলে, কমিশনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে না। কিন্তু তাদের দেওয়া প্রতিটি লিখিত প্রস্তাব ও মতামত কমিশন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবে এবং কমিশনের সুপারিশে তার যথাসাধ্য প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট থাকবে।”
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “জুলাই বিপ্লবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্তদের পরামর্শ কমিশন নেবে না। যেসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা দল জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় সক্রিয়ভাবে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থেকেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নকে সমর্থন করেছে, ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে বৈধতা প্রদানে সাহায্য করেছে কমিশন সেইসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরিতে যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।”
সংস্কারের পরিধি কেমন হবে সে প্রসঙ্গে ৭টি উদ্দেশ্য তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, “সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত হবে বর্তমান সংবিধান পর্যালোচনাসহ জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলনের লক্ষ্যে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখন।”
কমিশন সাংবিধানিক সংস্কারের ৭টি উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছে। সেগুলো হলো,
১. দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আলোকে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।
২. ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন ঘটানো।
৩. রাজনীতি এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় সর্বস্তরে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা।
৪. ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার উত্থান রোধ।
৫. রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ, নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন।
৬. রাষ্ট্র ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যাপ্ত ক্ষমতায়ন।
৭. রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক এবং আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।