‘ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ফলের রস। আসেন আসেন খেয়ে যান। এক গ্লাস শরবত খান, শরীরের গরম কমান। প্রতি গ্লাস ১০ টাকা। আগে খাইবেন তারপর টাকা দিবেন।” এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে ফলের শরবত বিক্রি করছেন আতাউর রহমান। চারদিকে প্রচণ্ড গরম হাঁসফাঁস অবস্থা। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাওয়ার অবস্থা। তৃষ্ণার্তরা তাই ভিড় জমিয়েছেন আতাউরের দোকানে।
আতাউর জানালেন, কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে শরবত বিক্রি করছেন। আগে এতটা গরম ছিল না। এবার গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তাই প্রচণ্ড গরম থেকে প্রাণ বাঁচাতে, তৃষ্ণা মেটাতে তার দোকানে শরবত খেতে ভিড় করছেন মানুষ। জানালেন, প্রতিদিন কম করে হলেও পাঁচ হাজার টাকার শরবত বিক্রি করেন। যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে তার।
বৈশাখের খর তাপে প্রকৃতিতে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে তাপমাত্রার। ভয়াবহ গরমে অতিষ্ঠ শ্রম ও চাকরিজীবীরা স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন আতাউরের মতো ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে এসে। শুধু লেবু বা বেলের শরবতই নয়, আখের রসও বিক্রি হচ্ছে গরমে। বেড়েছে চাহিদা। বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। শুধু কারওয়ান বাজারই নয় রাজধানীর ফার্মগেট, শাহবাগ, বাংলামোটর, পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইল, মৌচাক, মালিবাগ মোড়গুলোতে দাড়ালেই চোখে পড়ে শরবত আর রসের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো।
ফার্মগেটের ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা রফিক। তাকে ঘিরেও দেখা গেল অনেক ক্রেতা। প্রচণ্ড গরমে অনেক চালক রিকশা থামিয়ে এক গ্লাস খেয়ে শরীর ঠাণ্ডা করছেন। এক রিকশাচালক বললেন, রোদের যে তেজ আর পারছি না। বুকটা মনে হয় ফেটে যাবে। এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবত খেয়ে শরীরে মনে হয় বল ফিরে এলো।
আরেকজন ক্রেতা বললেন, প্রায়ভেট জব করি। বাইরে বাইরে ঘুরতে হয় আমাকে। তবে যে গরম শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যায়। শুধু পানিতে তৃষ্ণা মেটে না। তাই লেবুর শরবত খেলে অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যায়। এক বিক্রেতা জানালেন, গরমে অনেক ঘাম ঝরে। তাই মাঝে মাধ্যে স্যালাইন খাই। তবে ঠাণ্ডা লেবুর শরবত খেলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা রফিক সংবাদ প্রকাশকে বললেন, গরম যত বেশি হয়, শরবত বিক্রি তত বাড়ে। কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরম যাচ্ছে। এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। আগে দুই থেকে তিনশ গ্লাস বিক্রি হতো। এখন সেখানে বিক্রি হচ্ছে পাঁচশ থেকে ছয়শ গ্লাস। গত কয়েকদিন ধরে দিনে গড়ে ছয় হাজার টাকার শবরত বিক্রি হচ্ছে।”
ফুটপাতের শরবত স্বাস্থ্যকর নয়- এমন অভিযোগে রফিক বললেন, “ফুটপাতের শরবত বলে অনেকে অনেক কথা বলেন। তবে আমার ব্যবসার জীবনে এখন পর্যন্ত কেউ এসে বলেননি আমার শরবত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এসব শরবতে ভেজাল নেই, স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকি নেই।”
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে আখের রস কিংবা শরবতের দোকানগুলোর ছাতার নিচে এসে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বিক্রেতারা তৃষ্ণার্তদের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন লেবুর শরবত, বেল, পেঁপে, আখ, মাল্টার ঠাণ্ডা জুস। তবে এসব শরবত ও রসের মধ্যে আখের রস, ফলের শরবত ও লেবুর শরবতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর এর মধ্যে দামে কিছুটা কম ও কার্যকরী হওয়ায় লেবুর শরবতের চাহিদা ও বিক্রি সবচেয়ে বেশি। ফুটপাতের এসব ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের শরবতের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ক্রেতারা তোয়াক্কা করছেন না কিছুই।
ফার্মগেটে আব্দুল হেলাল নামের একজন ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সারাদিন কাজ করে সারারাত গরমে ঘুমানো যায় না। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেলেও পানির চাহিদা পূরণ হয় না। অথচ দুপুরে এক গ্লাস শরবত খেলে পেট ঠাণ্ডা হয়ে যায়।”
কাউসার নামে আরেকজন বলেন, “ফেসবুকে দেখেছি আখের রসে স্যাকারিন মেশানো হয়। যেটা আখের রসের মিষ্টি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই আখের রস খেয়ে আসছি, এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। তবে এসব শরবত কিংবা আখের রস পরীক্ষা করা দরকার। খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষা করে ফলাফল জানালে সবাই উপকৃত হতো।”
কয়েকজন ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে পানির তৃষ্ণা মেটাতে হলে শরবত-জুসের বিকল্প নেই। তবে এসব শরবত বা জুস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। তারপরও ভ্রাম্যমাণ এসব পানীয় পরীক্ষা করে দেখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা বিএসটিআই কর্মকর্তাদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।