• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শ্রমিক বিক্ষোভে পোশাক ও ওষুধ কারখানা বন্ধ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম
শ্রমিক বিক্ষোভে পোশাক ও ওষুধ কারখানা বন্ধ

সরকার পতনের পর বিভিন্ন মহলের একের পর এক দাবি ও বিক্ষোভের কারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে উৎপাদন খাতে। অনেক জায়গায় শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবির কারণে কাজে যাচ্ছেন না। অনেক জায়গায় আবার শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রাখছে কর্তৃপক্ষ।  

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ঢাকার সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে জিএবি লিমিটেডসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

জিএবি লিমিটেডের শ্রমিকরা জানান, তারা মালিপক্ষের কাছে আগেই কিছু ‍‍`যৌক্তিক‍‍` দাবি উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে তারা আজ মাঠে নেমেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলবে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, এই মুহূর্তে সেখানে জিএবি লিমিটেডসহ স্নোটেক্স, স্টারলিং গ্রুপ, নাসা অ্যাপারেন্স ও একমি এগ্রোভেট অ্যান্ড কনজ্যুমারস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো একেক জায়গায় একেক রকম। কিছু অভিন্ন দাবির মধ্যে আছে—হাজিরা বোনাস ও টিফিন বাবদ অর্থ দেওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, উশৃঙ্খল কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা ইত্যাদি। আবার স্নোটেক্স কারখানায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে নিয়োগ নিয়ে।

সারোয়ার আলম বলেন, “মালিকপক্ষের কাছ থেকে আমরা কোনো সাড়া পাচ্ছি না। শ্রমিকরাও আমাদের কথা শুনছেন না। মালিকপক্ষের উচিত শ্রমিকদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসে বিক্ষোভ সামাল দেওয়া।”

এদিকে বিক্ষোভে পিছিয়ে নেই জরুরি ওষুধ কারখানার শ্রমিকরাও। গাজীপুরে টানা ৯ দিন ধরে ২১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ২০টির অধিক ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা। যার কারণে বাধ্য হয়ে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, “হঠাৎ করে প্রায় সব বড় ওষুধ কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ওষুধ শিল্পের জন্য ভালো কোনো লক্ষণ নয়।”

আবদুল মুক্তাদির বলেন, “এই মুহূর্তে দাবি পূরণ করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে ওষুধ কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের বিক্ষোভ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা আমাদের কথা শুনতে চাচ্ছেন না। বরং তারা তাদের দাবি পূরণে আমাদের বাধ্য করতে চান। যার কারণে বড় বড় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে।”

এসিআই হেলথকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মহিবুজ জামান বলেন, “দাবি পূরণে তারা আমাদের মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে।”

মহিবুজ জামান বলেন, চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকরা তাদের চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অন্যদিকে স্থায়ী শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন। এসিআই স্থায়ী কর্মীদের যৌক্তিক দাবি পূরণ করেছে এবং তাদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে।

মহিবুজ জামান আরও বলেন, “যেহেতু ফার্মাসিউটিক্যালস একটি বিশেষায়িত শিল্প, তাই এখানে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের জ্ঞান প্রয়োজন। শ্রমিকরা সেই পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত তাদের চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে হবে।”

বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী নওয়াজ বলেন, “ওষুধ শিল্পের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করি।

মোহাম্মদ আলী নওয়াজ বলেন, “বেক্সিমকো ফার্মার কারখানায় ১০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে প্রায় দুই হাজার চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। স্থায়ী শ্রমিকরা প্রতি দুই বছর অন্তর মূল বেতনের ওপর ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি ও প্রতি সপ্তাহে দুই দিন ছুটির দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি পূরণ করা বেশি কঠিন।”

এই বিক্ষোভের কারণে বেক্সিমকো ফার্মার কারখানা দুই দিন বন্ধ ছিল। অবশ্য পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি পূরণ করে কাজে ফিরে যেতে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ওষুধ খাতের শ্রমিকদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করেছি। এই খাতের শ্রমিকরা ভেবেছিল, আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে এবং তারা ধরে নিয়েছিল যে তাদের ইচ্ছা বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু এভাবে হঠাৎ দাবি উত্থাপন করে আলোচনার সুযোগ না রাখা বোকামি। এটা শিল্পের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। শ্রমিক ও মালিকপক্ষকে আলোচনায় বসা উচিত।”

Link copied!